লোপাটের আশঙ্কায় কোটি টাকা ফেরত

 

স্টাফ রিপোর্টার: অর্থ লোপাট হতে পারে এই আশঙ্কায় বরাদ্দের এক কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সময়মত বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিঠি লুকিয়ে রাখে। বাস্তবায়নের সময় শেষ হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে বরাদ্দের বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়। সরঞ্জাম কেনার আলাদা আলাদা নির্দেশনা, সময় স্বল্পতা, ব্যয়ের খাত নির্দিষ্ট না হওয়া এবং টাকা লোপাটের আশঙ্কায় ওই বরাদ্দ গ্রহণ করেননি সিভিল সার্জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ‘বিশেষ’ বরাদ্দকৃত এত বড় অংকের টাকায় চিকিত্সা সরঞ্জাম কেনার জন্য কোনও বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। চারদিকে যখন দুর্নীতির নানা খবর সেই সময় এই টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরে সিভিল সার্জন ডা. মতিউর রহমান বলেন, আমরা ভেবে দেখেছি, এ সময়ের মধ্যে কাজ সঠিকভাবে হবে না। সরকারের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই টাকা ফেরত পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, এ বরাদ্দের আদেশ হয়েছে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ঠিকাদার গত ৯ মে আমাকে তা দেখান। এ অবস্থায় আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক(অর্থ) বরাবর চিঠি দেই। ২৮ মে আমার কাছে ফিরতি চিঠি আসে। ওই চিঠিতে এই সময়ের মধ্যে কার্যাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব কি না তা জেলা ক্রয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। সম্ভব না হলে টাকা ফেরতেরও নির্দেশনা ছিলো। ওই চিঠি পাওয়ার পর ক্রয় কমিটির সাথে বৈঠক করি। বৈঠকে এত অল্প সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে তা ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশের চিঠি প্রায় তিন মাস তাদের পকেটেই রেখে দেয়। শেষ মুহূর্তে এসে ওই চিঠি বের করে দেয়। কিন্তু তখন অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ওষুধপত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনা সম্ভব না। এর আগে চাঁদপুরের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ২২ নম্বর স্মারকে এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০ লাখ টাকা, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা বাবদ ২০ লাখ টাকা, লিলেন সামগ্রী বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্র বাবদ ৪০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার জন্য বিশেষ কিস্তির অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। এসব উপকরণ তিনটি ৫০ শয্যার হাসপাতাল (কচুয়া, মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জ), ৪টি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল (শাহরাস্তি, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ ও মতলব) এবং ২০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিতরণের জন্য চাওয়া হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (বাজেট) ডা. মো. আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে সিভিল সার্জন চাঁদপুরের নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা হাসপাতালগুলোর জন্য ৪৮৬৮ এমএসআর খাতে অতিরিক্ত (এক কোটি) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। বিএমএ চাঁদপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বরাদ্দের বিষয়টি আমরাও জানতাম না। এক রকম লুকোচুরির মধ্যেই এ বরাদ্দটি জায়েজ করার চেষ্টা চলছিলো। কিন্তু শেষ সময়ে সিভিল সার্জনের সিদ্ধান্তে তা বুমেরাং হয়ে গেছে।’ এদিকে, এই সরঞ্জামাদি ক্রয়ের অন্যতম ঠিকাদার (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) আলমগীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, সিভিল সার্জন চাইলে মালামাল ক্রয় করতে পারতেন। তিনি ইচ্ছে করেই বিশেষ বরাদ্দটি ফেরত দিয়েছেন। তবে মালামাল ক্রয় না করার কারণে এ অর্থ বছরে বিপুল পরিমাণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।