লাশের জন্য দুঃসহ অপেক্ষা : আজ রাষ্ট্রীয় শোক

পরিচয় সুনিশ্চিত হয়েই নেপাল মৃতদেহ হস্তান্তর করতে চায়

স্টাফ রিপোর্টার: নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ সারাদেশে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে তার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান জানান। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে এক দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সারাদেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়া শুক্রবার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচিও বৈঠক থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।

গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চারজন ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি। এই দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগেই মঙ্গলবার দেশে ফিরে আসেন। এরপর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গতকাল বুধবার সকালে তিনি নিজের কার্যালয়ে জরম্নরি বৈঠকে বসেন। দুর্ঘটনার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তিন বাহিনীর প্রধান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থ করে তোলার ওপর গুরম্নত্ব দিচ্ছেন। এ লক্ষ্যে বার্ন ইউনিটের দক্ষ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসক দল কাঠমান্ডুতে পাঠানোর জন্য প্রস্ত্মুত করা হয়েছে এবং মৃতদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহের জন্য পুলিশের একটি দলকেও নেপাল পাঠানো হচ্ছে বলে জানান মুখ্য সচিব। তিনি বলেন, তারা (আহতরা) যদি রাজি হন তাহলে তাদের আমাদের বার্ন ইউনিটে এনেও চিকিৎসা দেয়া হবে। কারণ আমাদের বার্ন ইউনিটে খুবই উন্নত চিকিৎসা হয়। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে ‘গুরুতর আহত’ দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান নজিবুর রহমান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অ্যাভিয়েশন নিরাপত্তা আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন: নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি নাগরিকদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত সোমবারের ওই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬ বাংলাদেশি মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই সব মরদেহ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা হাসপাতালের ফরেনসিক ল্যাবে রয়েছে। কাঠমান্ডু থেকে বিবিসি বাংলার আবুল কালাম আযাদ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার প্রমোদ শ্রেষ্ঠকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, পরিচয় সুনিশ্চিত হয়েই তারা মৃতদেহ হন্তান্তর করতে চান। মরদেহ পরিচয় জানতে চারটি দল কাজ করছে। এর মধ্যে দুটি দল ময়না তদন্ত করছে। একটি দল মরদেহের নানা স্যাম্পল নিয়ে সেখান থেকে পরিচয় জানার চেষ্টা করছে আর অন্যটি পরিবারের স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

গত মঙ্গলবার ১১টি মরদেহের পোস্ট মর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই এগারোজন কারা সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। ৪৯টি লাশের ময়নাতদন্ত চলবে আরও কয়েকদিন। কর্তৃপক্ষ বলছে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে স্বজনের কাছে হস্তান্তর কিংবা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়ার পরেও যদি পরিচয় নিশ্চিত না হয় তাহলে শেষ কাজটি হবে ডিএনএ পরীক্ষা করা।

এখন মৃতদেহের পরিচয় নিশ্চিত করতে কতোদিন সময় লাগবে সেটি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, তবে অন্তত তিন চার দিন লাগবে ময়নাতদন্তের জন্যই। প্রাথমিক তদন্তে পরিচয় নিশ্চিত হতেই এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।