রামুতে ৩০ বৌদ্ধ বিহারে শুভ প্রবারনা পূর্ণিমায় প্রাণের উচ্ছাসে মেতে উঠবে বৌদ্ধ সম্প্রদায় : আকাশে উড়বে ফানুস, বাঁকখালী নদীতে ভাসাবে জাহাজ

খালেদ হোসেন টাপু,রামু

আজ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে এ পূর্ণিমা পালিত হয়। এ উপলক্ষে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় দুইদিনব্যাপী ধর্মীয় কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যাপক  উৎসাহ উদ্দীপনায় এ উৎসব পালন করবে।  গত ১ মাস ধরে উপজেলার ৩০টি বিহারে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, বৌদ্ধ পাড়া মহল্লায় নানা আয়োজনের প্রস্তুতি ও কল্প জাহাজ তৈরীর কাজ চলে । জানা গেছে আশ্বিনী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। এ দিনটি নানা কারণে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এই তিথিতে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া ভিক্ষুদের বর্ষাব্রতের অবসান হয়, পরেরদিন থেকে এক মাসব্যাপী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েন কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য। আশ্বিনী পূর্ণিমার পরদিন থেকে আরম্ভ করে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত মাসব্যাপী সময়ে বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সহিংস ঘটনায় গত বছর রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে উৎসব ছাড়াই শেষ হয় প্রবারণার অনুষ্ঠান এবং বাঁকখালী নদীতে ভাসেনি কল্প জাহাজ, আকাশে উড়ায়নি ফানুস। বছর ঘুরে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে জেগেছে রামু বৌদ্ধ সম্প্রদায়। এবছর দূর্গা পূজা, ঈদুল আযহা ও প্রবারণা পূর্ণিমাকে ঘিরে রামুর সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আবারো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে উজ্জীবিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর শনিবার প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে নবনির্মিত ও পূণসংস্কারকতৃ রামু সীমা বিহার (সীমা কমপ্লেক্স) উত্তর মিঠাছড়ির বিমুক্তি বির্দশন ভাবনাকেন্দ্র, শ্রীকুল গ্রামের মৈত্রি বিহার, লাল চিং, সাদা চিং ও অর্পনা চরন চিং, চেরাংঘাটা উসাইসেন বৌদ্ধ বিহার, জাদিপাড়া আর্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, উখিয়ারঘোনা জেতবন বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহার, চাকমারকুল অজন্তা বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও অক্ষত লামার পাড়া ক্যাং, রাংকুট বৌদ্ধ বিহারসহ ২২টি বৌদ্ধ বিহারে বর্ণিল আলোকসজ্জাসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিযেছে। পরের দিন (আগামী ২০ অক্টোবর) রোববার বাঁকখালী নদীতে ভাসানো হবে জাহাজ। এ উৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যে রামু উপজেলার হাইটুপী, শ্রীকুল, রাজারকুল, দ্বীপ শ্রীকুল, চরপাড়া, উখিয়ারঘোনা, মিঠাছড়ি, হাজারীকুল, ফারিকুল গ্রামে বাঁশ, কাঠ, বেত ও কাগজে শৈল্পিক কারুকাজ করে অভিজ্ঞ কারিগররা ময়ূর, কবুতর, হাঁস, চূড়াসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতির আদলে দৃষ্টি-নন্দন কল্প জাহাজ তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে।

রামু কেন্দ্রীয় সীমারে আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞান্দন ভিক্ষু জানান, রামুতে এবছর প্রবারণা পূর্ণিমা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে সকল বৌদ্ধ বিহার বৌদ্ধ পল্লীতে পালন করা হবে।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসানো উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মিথুন বড়–য়া বোথাম জানান, শনিবার ভোরে প্রভাত ফেরী সহকারে বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধপূজার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল ৮টায় বিহারে ধর্মীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ৮টায় অষ্ট শীল গ্রহণ, বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় সীমা বিহারে ধর্মীয় সভা, সন্ধ্যা ৬টায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন, সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার কর্মসূচি রয়েছে।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসানো উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক জ্যোতির্ময় বড়–য়া রিগ্যান জানান,  এসব কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাবেক সভাপতি পণ্ডিত ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের। প্রধান অতিথি থাকবেন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি।

বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন সভাপতি পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের জানান, ‘ভারতবর্ষের বৈশালীবাসী দুর্ভিক্ষ ও মহামারি থেকে পরিত্রাণের আশায় বুদ্ধকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বুদ্ধ সেবার বৈশালী নদী পার হয়ে গিয়েছিলেন তাদের আমন্ত্রণে। বুদ্ধের সেই নদী পারাপারকে স্মরণে রেখেই মূলত জাহাজ ভাসা উৎসবটির প্রচলন হয়।’ এই জাহাজ ভাসা উৎসব মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন এবং আরাকানের পর বাংলাদেশের রামুতেই শুধু উদযাপন করা হয় ।

উল্লেখ্য গত ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে দুবৃর্ত্তরা অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর গত বছর ঐতিহাসিক এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়নি। সহিংস ঘটনার ১ বছর পূর্ণ হলো।  সে সাথে মুসলিম ও বৌদ্ধদের মাঝে ফিরে আসছে সম্প্রীতি এমটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। গত ৩ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামুর নব নির্মিত ১২টি বৌদ্ধ বিহার উদ্বোধনের পরেই এসব বিহার গুলোতে নিয়মিত পূজা প্রার্থনা  চলছে।