রাজহাঁস পুষে পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও আর্থিক সহযোগিতায় মেহেরপুরে গৃহিণীরা

 

মহাসিন আলী মেহেরপুর: মেহেরপুরে রাজহাঁস চাষের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। গ্রাম-গঞ্জের গৃহিণীরা বাড়ি-বাড়ি মিনি খামার করে রাজহাঁস পালন করছেন। এতে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সংসারে আর্থিক সহযোগিতা করে চলেছেন ওইসব গৃহিণীরা। তবে এসব গৃহিণীদের নেই কোনো বাস্তব প্রশিক্ষণ।

মেহেরপুর জেলা জুড়ে ২৯ কিলোমিটার ভৈরব নদ। এছাড়া রয়েছে মাথাভাঙ্গা নদীর মেহেরপুর পাড় এবং মেহেরপুর জেলার মধ্যে নব্যতা হারিয়ে ফেলা কাজলা ও মরাগাং নামের নদীসহ অসংখ্য খাল-বিল। ভৈরব নদসহ এসব নদী ও খাল-বিল পাড়ের গৃহিণীরা বাড়তি আয়ের আশায় ঘরে ঘরে পুষেছেন ১০/১২ থেকে শুরু করে ৪০/৫০ টি করে রাজহাঁস। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামের মাঠের ধারের বাড়িতে চলছে ওই হাঁস পালন। তবে ওই সব বাড়িতে ১৫/২০ টির বেশি রাজহাঁস পালন করা হয়না। সরেজমিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাইপুর খাঁপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় মাঠে চরছে কয়েকশত রাজহাঁস। এসব হাঁসের মধ্যে ওই পাড়ার গৃহবধূ শাহিদা খাতুনের ১২, সানোয়ারার ১৬, ফজিলা খাতুনের ১০, রহিমা খাতুনের ১৪, বৃষ্টি আক্তারের ৮, জালেমন বেগমের ১৮, ফেরদৌসির ১৫ ও বানুয়ার ১৩ টি হাঁস রয়েছে। এসব হাঁসসহ এলাকার আরো কিছু গৃহবধূর রাজহাঁস পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে চরছে। এসব গৃহবধূরা জানালেন- হাঁস বিক্রি করে যে অর্থ আসে তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়ার খরচ যোগান দেয়ার পাশাপাশি সংসারের অন্যান্য খরচ মিটাতে স্বামীর সহযোগিতা করেন তারা।

মেহেরপুর ভৈরব নদ পাড়ের গ্রাম যাদবপুর। ওই গ্রামের মোমেজানকে দেখা যায়- ভৈরব পাড়ে রাজহাঁস চরাতে। তিনি বলেন- তার আছে ৩ ডজন রাজহাঁস। তিনি সকাল বেলা হাঁসগুলো ছেড়ে দেন। ওই হাঁসগুলো ভৈরবে নেমে চরে বেড়ায়। দুপুরের দিকে একবার খোঁজ নিয়ে যান। আবার সন্ধ্যার আগে হাঁসগুলো তাড়িয়ে নিয়ে ঘরে তোলেন। হাঁসপালনের জন্য তার বেশি পরিশ্রম ও খরচ করতে হয় না। দিনে একবার বাড়িতে খেতে দিলেই তাদের চলে। তারা নদের জার্মানী ও নদের ধারের এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়। তিনি আরো বলেন- ভৈরব পাড়ের গোভীপুর, রাজাপুর, রাধাকান্তপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের অনেক গৃহিনী আছেন যার ৫০/৬০ টি করে রাজহাঁস রয়েছে। তিনি আরো জানান- একেকটি হাঁস ৪ কেজি থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। ২শত টাকা কেজি দরে এ হাঁস বিক্রি হয়। এক জোড়া রাজহাঁসের বাচ্চা বিক্রি হয় ৩শত টাকায়। আর বাচ্চা ফোঁটানোর উপযোগী ডিম একশত টাকা জোড়া দরে বিক্রি হয়।

মেহেরপুর জেলা উন্নয়ন ফোরামের প্রেসিডেন্ট রফিক-উল আলম বলেন- গ্রাম-গঞ্জের এসব গৃহিনীদের অধিকাংশই বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে রাজহাঁস পালন করছেন। তাই তাদের লাভের সিংহভাগ যাচ্ছে এনজিওর ঘরে। এসব গৃহিণীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানসহ সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হলে তারা বেশি লাভবান হবেন এবং রাজহাঁস পালানের উদ্যোক্তা আরো বৃদ্ধি পাবে।

মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়- মেহেরপুর জেলায় হাঁস-মুরগীর খামারের পরিসংখ্যান তাদের কাছে আছে। কিন্তু এভাবে বাড়ি বাড়ি গড়ে ওঠা রাজহাঁস পালনের মিনি খামারের পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে গ্রাম-গঞ্জের গৃহিনীদের এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানান জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। এ ধরনের রাজহাঁস পালন একদিকে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণে অংশ নিচ্ছে তেমনি সংসার খরচে আর্থিক সহযোগিতা করছে গৃহিনীরা বলে মন্তব্য করলেন প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা।