যৌতুকের জন্য কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে মৃত্যুদণ্ডের আইন আসছে

স্টাফ রিপোর্টার: যৌতুক দাবি বা লেনদেনের দায়ে শুধু জেল-জরিমানাই নয়, যৌতুকের জন্য কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধন করছে সরকার। যৌতুকের শাস্তি বাড়িয়ে ‘যৌতুক নিরোধ আইন’ সংশোধনে খসড়া করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনে যৌতুক দাবি ও লেনদেনের শাস্তি নির্দিষ্ট করা থাকলেও যৌতুক চেয়ে নির্যাতনের শাস্তি নিয়ে কিছু বলা ছিলো না। খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর স্বামী, স্বামীর পিতা-মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এছাড়া যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করলে যাবজ্জীবন কারদণ্ড, মারাত্মক জখমের জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা অন্যূন ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যৌতুকের জন্য অঙ্গহানির শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা কমপক্ষে ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।  তবে স্ত্রীর জখমের ধরন অনুযায়ী স্বামীকে অর্থদণ্ডসহ আমৃত্যু ভরণ পোষণ প্রদান করতে হবে।

সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে সাধারণ জখম করলে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

খসড়ায় ‘যৌতুক’ বলতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোনো স্থাবর বা অস্থাবর বা মূল্যবান জামানতকে বোঝানো হয়েছে। কোনো ব্যক্তি কনে বা বর পক্ষের নিকট যৌতুক দাবি বা যৌতুক নিলে বা দিলে অধরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। কেউ যৌতুক দাবি বা লেনদেন করলে সর্বনিম্ন এক বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি যৌতুক নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা করলে তিনি ৬ মাসের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত হবেন বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেও যৌতুকের জন্য কোনো নারীর মৃত্যু ঘটানোর দায়ে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। যৌতুক নিরোধ আইনেও একই ধরনের শাস্তির বিধান যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও অপরাধকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে খসড়া আইনে।

আইন সংশোধন করে সাজা বাড়ানোর বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) বিকাশ কিশোর দাশ বলেন, সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন প্রেক্ষাপটে সংশোধিত আইনে যৌতুকের শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। যৌতুক নিরোধ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে সব অপরাধই আমলযোগ্য, জামিন অযোগ্য ও প্রযোজ্যক্ষেত্রে আপসযোগ্য হবে।

নতুন এ আইন কার্যকরের পর ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন রহিত হলেও ওই আইনের আলোকে প্রণীত বিধি ও প্রবিধি উপ-আইন হিসেবে গণ্য হবে। নতুন যৌতুক নিরোধ আইন অনুযায়ী সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।