যে কোন মূল্যে ২৪ ডিসেম্বর শাপলায় সমাবেশ : হেফাজত

স্টাফ রিপোর্টার: ১৩ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ২৪ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এজন্য প্রায় তিন সপ্তা আগে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অনুমতি চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। তারপরও ওইদিন যে কোনো মূল্যে ঘোষিত সমাবেশ সফল করতে চায় সংগঠনটি। এজন্য ১৮ দলের অবরোধ প্রত্যাহার এবং সরকারের সহযোগিতা চান সংগঠনের নেতারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর বারিধারায় এক সংবাদসম্মেলনে ঢাকা মহানগর হেফাজতের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী মহাসমাবেশ সফল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক চেতনা-বিশ্বাসের দিক থেকে মুসলমান। মুসলমান মাত্রই যাবতীয় কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস লালন করে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের সংবিধানের ভিত্তি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস-এর ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। এটাই যুক্তিসঙ্গত ও স্বীকার্য বাস্তবতা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ অংশটিকে  গুটিকয় নাস্তিক-মুরতাদদের শলা-পরামর্শে বিলুপ্ত করা হয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের চেতনা-বিশ্বাসের প্রতি কোনোরূপ তোয়াক্কা না করে মুসলমানদের অন্তরকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তিনি বলেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস অংশটি- যা সংবিধানে সুদীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তর্ভুক্ত ছিলো, তা সংবিধানে পুনঃস্থাপন করতে হবে। কারণ, যে কোনো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের চেতনা-বিশ্বাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে চলেছে। দেশজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব, হানাহানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ সহিসংতার মাত্রা এতোটা ভয়াবহ  যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করছে প্রতিনিয়ত। আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হচ্ছে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় বহু সম্পদ। থমকে গেছে দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে হাজারো মায়ের সন্তান। কোমলমতি শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘুদেরও ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন। মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। দেশের এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, জনসাধারণের জান-মালের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি দেশবাসী আর দেখতে চায় না। তাই এহেন অসহনীয় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে যে কোনো মূল্যে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিরাজমান সঙ্কট যেহেতু নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক। তাই  রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ পন্থায় এর সমাধান বের করতে হবে এবং এর প্রধান ভূমিকা সরকারকেই পালন করতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধীদলকে দমন-পীড়ন ও যাবতীয় বলপ্রয়োগের নীতি এবং সংঘাত-সহিংসতার পথ পরিহার করে সমঝোতার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অসহিংস, শান্তিপূর্ণ পন্থায় দেশ ও জাতির মঙ্গল ত্বরান্বিত করতে হবে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করা একটি নাগরিক, সাংবিধানিক ও ধর্মীয় অধিকার। এ অধিকারে হস্তক্ষেপ করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিগত দিনে হেফাজতে ইসলাম দেশব্যাপী যতগুলো সভা-সমাবেশ করেছে তার সবগুলোই ছিলো শান্তি-শৃঙ্খলার মূর্ত প্রতীক। আর ৫ মের সমাবেশে যে অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য সম্পূর্ণরূপে সরকারই দায়ী। তাই আমরা মনে করি হেফাজতে ইসলামের পূর্বঘোষিত শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার দেশের সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত রাখবে। তাতে বাধা দিয়ে জনগণের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে না। আমাদের সমাবেশ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ওই সমাবেশে আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফী বিশেষ দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করবেন।