যশোরের ফিলিং স্টেশনে কুপিয়ে জোড়া খুন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ফিলিং স্টেশনের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ম্যানেজার ও স্থানীয় এক কলেজছাত্রকে। গত রোববার রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটেছে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চড়াভিটা বাজারে আবদুল বারী ফিলিং স্টেশনে। নিহতরা হলেন- ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার ওবায়দুর রহমান (৩০) ও রঘুনাথপুর গ্রামের সদর উদ্দিন খানের ছেলে এমএম কলেজছাত্র লিজন আহমেদ অপু (২৪)। সোমবার সকালে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমর্গে পাঠিয়েছে। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী (নজলম্যান) সিরাজুল ইসলামকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ছয়রুদ্দিন আহমেদ জানান, সোমবার সকালে স্থানীয় এক ব্যক্তি আবদুল বারী ফিলিং স্টেশনে তেল নিতে এসে ডেকে না পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে কোপানো লাশ দুটি দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ পাম্পের দরজার তালা ভেঙে ঘটনাস্থল থেকে দু’জনের লাশ উদ্ধার করে। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্টেশনের ম্যানেজার বাঘারপাড়া উপজেলার দশপাখিয়া গ্রামের রহমান মোল্লার ছেলে ওবায়দুর রহমান ও নজলম্যান (কর্মচারী) যশোর সদরের মুনসেফপুর এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম নিয়মিত ফিলিং স্টেশনেই ঘুমাতেন। কলেজছাত্র লিজন আহমেদ অপুর বাড়িতে সংস্কার কাজ চলায় তিনিও তাদের সাথে কয়েকদিন সেখানেই থাকতেন। রোববার রাতেও তারা ঘুমিয়েছিলেন। সকালে ওবায়দুর ও অপুর লাশ উদ্ধারের সময় নজলম্যান সিরাজুলকে পাওয়া যায়নি। তিনি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

টাকার জন্য খুন: জোড়া খুন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চললেও এর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফিলিং স্টেশনে ঘুমানোর সময় কলেজছাত্র অপুর কাছে আগের দিনের সরিষা বিক্রির ৫০ হাজার টাকাও ছিলো। তবে অপুর ভগি্নপতি বাবর আলী জানিয়েছেন, তারা মানতে পারছেন না যে, শুধু এই কারণে অপুসহ দু’জনকে হত্যা করা হবে। তাদের ধারণা, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। অপুর স্বজনরা জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে অপু বিদেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলো। এজন্য এক ব্যক্তিকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাদের আশঙ্কা, এই বিদেশে যাওয়ার টাকাই অপুর কাল হয়েছে।
অপুর চাচা আবুল কালাম ও চাচাতো ভাই আকরাম আলী মনে করছেন, খুনের প্রকৃত কারণ বের করতে হলে নিখোঁজ নজলম্যান সিরাজুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ সবচেয়ে জরুরি।

ফিলিং স্টেশনে টাকা ছিলো না: ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী মাসুদুর রহমান জানান, রাতে ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকে। এর আগেই প্রতিদিনের হিসাব-নিকাশ করে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। রোববারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই পাম্পে তেমন কোনো টাকাও ছিল না। তার মতে, ম্যানেজার ওবায়দুরের কোনো শত্রুও নেই। তাই কেন তাদের হত্যা করা হলো, এটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

পুলিশি তপরতা: হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ছয়রুদ্দিন আহমেদ জানান, কী কারণে জোড়া খুন হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ নজলম্যান সিরাজুল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ তাকে আটকের জন্য অভিযান শুরু করেছে। তাকে আটক করতে পারলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। হত্যার খবর পেয়ে সকালে যশোর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে পরিদর্শন শেষে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হকও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি নিঃসন্দেহে পরিকল্পিত। নিখোঁজ নজলম্যান সিরাজুলকে ধরতে পারলেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসবে।’ এদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাওসার আহম্মেদ জানান, ইতিমধ্যে তারা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধার করেছেন। ঘটনাস্থলের অদূরে একটি পুকুরের পাশে রক্তমাখা ওই কুড়াল ছাড়াও ছোট একটি বালতিতে রক্তমাখা পানি ছিল। তবে এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। মামলার প্রস্তুতি চলছে। নিহত ওবায়দুর ও অপুর লাশের ময়নাতদন্ত গতকাল সোমবার বিকেলে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে শেষ হয়েছে। এরপর বিকেলেই লাশ দুটি নেয়া হয়েছে নিজ নিজ বাড়িতে।