ম্যানচেস্টার বিস্ফোরণে নিহত ২২ : আইএস’র দায় স্বীকার

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর:

ব্রিটেনের পুলিশ জানিয়েছে ম্যানচেস্টার শহরের অ্যারেনায় সোমবার এক পপ কনসার্টের পর যে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়েছে, সেই হামলা, তাদের ধারণা, চালিয়েছে সালমান আবেদি নামে ব্যক্তি। বাইশ বছরের এই হামলাকারীর জন্ম ম্যানচেস্টারে এবং তার পরিবার এসেছে লিবিয়া থেকে।
সোমবার রাতের এই হামলায় ২২ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৫৯ জন আহত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনজন নিহতের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাফি রোজ রুসসের বয়স ৮ । ম্যানচেস্টারের পুলিশ বলছে সালমান আবেদি এই হামলা একা চালিয়েছে নাকি তার আরও কোনো সহযোগী ছিল সেটাই এখন তাদের অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার এরিনা তখন মার্কিন পপগায়ক অ্যারিয়ানা গ্রান্ডের সুরের মূর্ছনায় ভরে উঠেছে। কয়েক হাজার শ্রোতা তখন বিভোর সুরের জাদুতে। হঠাতই বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে ২১ হাজার দর্শকসহ গোটা স্টেডিয়াম। মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ হারিয়ে যায় আতঙ্কের আর্তনাদে। অনুষ্ঠানও তখন শেষের দিকে। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৪টা) নাগাদ ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের শব্দ। বিকট সেই শব্দ মেলাতে না মেলাতেই আরও একটি বিস্ফোরণ। পরপর দুটি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ২২ জনের। আহত অন্তত ৫৯। ভয়ে, আতঙ্কে এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেন মানুষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে চলে আসে অ্যাম্বুল্যান্স, বোমা ডিসপোজাল স্কোয়াডসহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। আরও হামলার আশঙ্কায় আরেনা সংলগ্ন

ভিক্টোরিয়া স্টেশনের ট্রেন চলাচলও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ-তরুণী বা কিশোর-কিশোরী বলে জানা গেছে। এটিকে একটি আত্মঘাতী হামলা বলে দাবি করেছে পুলিশ। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এক জঙ্গিরও। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, একটি নয়, পরপর দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে এরিনায়। স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারের পাশেই বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণে সম্ভবত ব্যবহার করা হয়েছে আইইডি। ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লাসে ফেটে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সমর্থকরা। পরে মঙ্গলবার ওই হামলার দায় স্বীকার করে বার্তা পাঠায় আইএস।

সেখানে বলা হয়, ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় ‘ক্রুসেডরদের এক জমায়েতে’ একটি বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছিলেন আইএসের কথিত ‘খিলাফতের একজন সৈনিক’। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের আড়াই সপ্তাহ আগে বিস্ফোরণের এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। ভোটের প্রচার স্থগিত রেখে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত কোবরা কমিটির বৈঠকে বসেন তিনি। অন্য দলগুলোও নির্বাচনী প্রচার স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন টুইট করে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ম্যানচেস্টারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার নিন্দা ও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ইনডোর স্টেডিয়াম ম্যানচেস্টার অ্যারেনা কনসার্ট ভেন্যু হিসেবেও জনপ্রিয়। একসঙ্গে প্রায় ২১ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।

বিবিসি জানিয়েছে, ২৩ বছর বয়সী মার্কিন গায়িকা অ্যারিয়ানা গ্রান্ডে তার পরিবেশনা শেষে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পরপরই অ্যারেনার প্রবেশপথের কাছে বিস্ফোরণের ওই ঘটনা ঘটে। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় এই শিল্পী অক্ষত রয়েছেন। এক টুইটে তিনি বলেছেন, এই ঘটনায় তার হৃদয় ভেঙে গেছে। কিছু বলার ভাষাও তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।
কনসার্ট দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে অনেক শিশুও ছিলো। বিস্ফোরণের পর সেখানে আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়।
অ্যান্ডি হোলি নামে একজন জানান, তিনি কনসার্ট শেষে স্ত্রী আর মেয়েকে নেয়ার জন্য অ্যারেনার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিনি প্রায় ৩০ ফুট দূরে ছিটকে পড়নে। উঠে দাঁড়িয়ে দেখি, অনেকে মেঝেতে পড়ে আছে। তখন আমার প্রথম চিন্তা ছিলো যেভাবে হোক ভেতরে ঢুকে আমার পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু ভেতরে তাদের খুঁজে না পেয়ে বাইরে এসে পুলিশ আর দমকল কর্মীদের সাথে মিলে হতাহতদের মধ্যে আমার স্ত্রী আর মেয়েকে খুঁজতে শুরু করি। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের অক্ষত অবস্থাতেই খুঁজে পাই। এমা জনসন নামের আরেকজন জানান, ১৫ ও ১৭ বছর বয়সী দুই মেয়েকে কনসার্ট শেষে নিতে অ্যারেনায় এসেছিলেন তিনি ও তার স্বামী।

বিবিসি রেডিও ম্যানচেস্টারকে তিনি বলেন, প্রবেশ পথের হল ঘরটিতে ওই বিস্ফোরণ ঘটে এবং সেটি বোমা ছিলো বলেই তার দৃঢ় বিশ্বাস। আমরা সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ কাচগুলো বিস্ফোরিত হলো। পুরো ভবন কেঁপে উঠল। বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম, তারপর এলো আগুনের হল্কা। অনেক মানুষ পড়েছিলো আশপাশে। ঘটনাস্থলে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন এমন স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে বিবিসির একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, আহতদের ক্ষত বোমার শার্পনেলের আঘাতের মতো। ঠিক দুই মাস আগে গত ২২ মার্চ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে এক জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ পাঁচজন নিহত হন, আহত হন অন্তত ৪০ জন। আর ২০০৫ সালে লন্ডনের চার জায়গায় একসঙ্গে আত্মঘাতী হামলায় ৫২ জন নিহত হন।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রচার বন্ধ: আর মাত্র ২ সপ্তাহ পর যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচন। তার মধ্যেই এই ঘটনায় যথেষ্ট চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। জঙ্গি হামলার জেরে নির্বাচনের প্রচারণা সাময়িকভাবে স্থগিত করেন থেরেসা মে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত কোবরা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন তিনি। অন্য দলগুলোও নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন টুইট করে হামলার নিন্দা ও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন।