মেহেরপুর হিজুলীতে যৌথবাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে জামায়াত নেতা নিহত ৫টি ককটেল ও ১টি বন্দুক উদ্ধার : প্রতিবাদে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

স্টাফ রিপোর্টার: যৌথবাহিনী ও জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের হিজুলি গ্রামের জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বার (৫২)। সোমবার মধ্যরাতে রাজনগর দিনদত্ত ব্রিজের পাশে ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি ককটেল ও একটি দেশীয় বন্দুক উদ্ধার করেছে। এ দাবি করে মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মেহেরপুর সদরের রাজনগর এলাকায় নাশকতার অন্যতম হোতা ছিলেন জব্বার মেম্বার। আব্দুল জব্বার হিজুলী গ্রামের মৃত আব্দুল মালিথার ছেলে ও আমঝুপি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার। ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার মেহেরপুর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে জেলা জামায়াত।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৮টার দিকে হিজুলি গ্রামে অভিযান চালিয়ে জব্বার মেম্বারকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক রাত দেড়টার দিকে দিনদত্ত এলাকায় কয়েকজন আসামিকে ধরতে যান যৌথবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীরা যৌথবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি-ককটেল নিক্ষেপ করে। আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দৃঢ় অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় পালিয়ে যায় আব্দুল জব্বার। এক পর্যায়ে পিছু হটে যায় হামলকারীরা। পরে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জব্বারকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। ওই রাতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ৫টি ককটেল, একটি দেশীয় বন্দুক উদ্ধার করা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আছর হিজুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তার লাশ দাফন হয়।

নিহত আব্দুল জব্বার ছিলেন হিজুলী গ্রামের মৃত আব্দুল মালিথার ২ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে। তিনি ২ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক। তার বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। বড় ছেলেসহ বাকি ৪ মেয়ে বিবাহিত। ছোট ছেলে অবিবাহিত।

নিহতের সেজ মেয়ে নাহিদা আমিন বেলি অভিযোগ করেছেন, জামায়াতের রাজনীতি করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার পিতা কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো না। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। জব্বারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ বুধবার মেহেরপুর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে জেলা জামায়াত। মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সংগঠনের পক্ষ থেকে হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলাবাসীকে সর্বাত্মক হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আজকের হরতালের সমর্থনে গতকাল জেলায় কোথাও জামায়াত-শিবিরের উদ্যোগে পিকেটিং হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে হিজুলি গ্রামে বন্দুকযুদ্ধের সময় আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর যারা গুলি-ককটেল হামলা চালিয়েছিলো তাদের গুলিতেই জব্বার মেম্বার নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। এ অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন এসআই ইকবাল হোসেন। একটি হত্যা অপরটি আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক নেতা আব্দুল মতিন, আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হিজুলি গ্রামের আব্দুল জব্বার মাস্টার ও শেখপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা আলেহীম হোসেনসহ জামায়াত-শিবির বিএনপির অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেহেরপুর সদর থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম।