মেহেরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

সাড়ে ১৩ বছর প্রধান শিক্ষক আর ৫ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই!

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক যুগেরও বেশি সময় প্রধান শিক্ষক ও অর্ধযুগ ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের ডাবল শিফটে দেড় হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যাক্রমে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন  অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। সমস্যা সমাধানে তারা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নারী শিক্ষার অন্যতম একটি বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয়টিতে ২০১০ সাল থেকে ডাবল শিফট চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১ হাজার ৬শ ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারী শিক্ষকের ৫০টি সৃষ্ট পদের বিপরীতে মাত্র ২৮ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। কর্মরতদের মধ্যেও আবার ৪ জন বিএড প্রশিক্ষণ নিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বর্তমানে ২ শিফটে ২২টি শাখার বিপরীতে মাত্র ২৪ জন শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর ওপর ২০০০ সালের ৭ জুন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নাজিমউদ্দিন আহমেদ বিদ্যালয় ত্যাগ করার পর আর কোনো প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেননি। সরকারি বিধি অনুযায়ী ডাবল শিফট পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে একজন প্রধান শিক্ষক ও ২ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা জরুরি। কিন্তু বিগত সাড়ে ১৩ বছরে প্রধান শিক্ষক ও ৫ বছরে কোনো সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে পদায়ন করা হয়নি। বিগত ৫ বছর যাবৎ একজন সহকারী শিক্ষকের তত্ত্ববধানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে সৃষ্ট ৪র্থ শ্রেণির ৫টি পদ পূরণ থাকা সত্বেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজি মো. আনিসুজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ২জন ৪র্থ শ্রেণির (মাস্টার রোল) কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ দিলেও তিনি তা আমলে নেন না। সঙ্গত কারণে শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিভাবক নজরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকার পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকের বেশ কিছু পদ শূন্য থাকায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।

মেহেরপুর জেলার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের অধিকাংশ পদ পূর্ণ রয়েছে। কিন্তু মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ২ শিফটে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানে কোনো প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা হচ্ছেনা।

মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আনিসুজ্জামান বলেন, খুলনা বিভাগের মোট ৩৬টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭/৮টিতে প্রধান শিক্ষক থাকলেও বাকিগুলোতে নেই। প্রধান শিক্ষক চেয়ে আমি নিজেই মহাপরিচালকের দপ্তরে ধরনা দিয়েছি। স্থানীয়ভাবে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সবশেষে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দোদুলকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছি।

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দোদুল জানান, আমি সবেমাত্র নির্বাচিত হয়েছি। মেহেরপুরের উন্নয়নে আমি কাজ করে যাবো। আমি সবার আগে মেহেরপুরের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবো। অতিসত্বর মেহেরপুরের ২টি সরকারি মহাবিদ্যালয় ও ২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেবো।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদ্বয়ের শূন্যপদ পূরণ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মেহেরপুরের সচেতনমহল শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।