মেহেরপুর গাংনীর জুগিন্দায় ডাকাতদলের বোমাঘাতে কৃষক নিহত মামলা

সন্দেহভাজন তিনজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ

গাংনী প্রতিনিধি: ডাকাতদলের বোমা হামলায় কয়েক দফা হতাহতের ঘটনায় মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। ডাকাতের বোমা হামলায় নিহত কৃষক স্বপন হোসেনের (৩০) গত বুধবার বিকেলে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরও করা হয়েছে। ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গতকাল দুপুরে পিরোজপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৩০) এবং গতরাত আটটার দিকে গাংনীর ওলিনগর থেকে আলমডাঙ্গার বাড়াদী গ্রামের ইকলাছ হোসেন (২৮) ও জিনারুল ইসলাম (২৮) নামের ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনজনই ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সরেজমিনে জুগিন্দা গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে একই পাড়ায় ডাকাতি প্রতিরোধকালে কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করেছিলো ডাকাতদলের সদস্যরা। এতে কয়েকজন আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই গ্রামের মানুষ তেমনভাবে ডাকাতি প্রতিরোধ করতে পারে না। স্থানীয়রা বলছেন এ সুযোগ নিয়ে হয়তোবা সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদ্যরা জুগিন্দা গ্রামকেই ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। একের পর এক সাতটি বাড়িতে হানা দিয়ে কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। মঙ্গলবার ডাকাতিকালে খোদা বক্সের ছেলে রবিউল ইসলামকে মারধর করে ডাকাত দল। রবিউল জানায়, ডাকাতদলের সদস্য সংখ্য যেমনি অনেক বেশি ছিলো তেমনি তাদের কাছে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ধারালো অস্ত্র ছিলো। ফলে নিরস্ত্র গ্রামবাসীর পক্ষে কোনোভাবেই তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিলো না।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় স্বপনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ওই দিনই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে হত্যামামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী শাহনাজ খাতুন। গতকাল দুপুরে মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে গাংনী থানা পুলিশ। রাত আটটার দিকে গাংনী-বামন্দী প্রধান সড়কের ওলিনগর নামক স্থানে কয়েকজন ছিনতাইকারী একটি নসিমন ছিনতাইকালে এলাকার মানুষ দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। এরা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদীর নুর বক্সের ছেলে একলাছ ও একই গ্রামের মহর আলীর ছেলে জিনারুল ইসলাম। পরে গাংনী থানার এএসআই মাজেদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। দুজনই জুগিন্দা গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে। এ তথ্য জানিয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম জানিয়েছেন শুধু ডাকাতি নয় মোটরসাইকেল ও নসিমন করিমন ছিনতাইকারীচক্রের অন্যতম সদস্য তারা। তাদের দলে আরো কয়েকজন রয়েছে। ওলিনগর থেকে তারা পালিয়ে গেলেও তাদের গ্রেফতারে বিভিন্নভাবে অভিযান চলছে।

এদিকে নিহত স্বপনের পরিবারসহ গোটা এলাকায় শোকের পাশাপাশি চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, হিজুলী গ্রামে ডাকাতদলের সদস্যরা একজনকে হত্যা করার পরদিন পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর গ্রামে ডাকাতি করে। দু দিন পরে একই এলাকার জুগিন্দা গ্রামের এ ঘটনায় রাতে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এখন তাদের সব নিয়ে গেলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। তাই পুলিশ যদি যথাযথভাবে জড়িতদের আইনের আওতায় না আনে তাহলে ডাকাতদলের সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মধ্যরাতে গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের জুগিন্দা গ্রামে একদল সশস্ত্র ডাকাত হানা দিয়ে ৭টি বাড়িতে ডাকাতি করে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে ডাকাতদলের বোমা হামলায় নিহত হন কৃষক স্বপন হোসেন। আহত হন স্বপনের ভাগ্নে জুয়েল রানা (২১)।