মেহেরপুর গাংনীর কষবা গ্রামের বিচার উদ্দীনের বিচার

সমাজপতিদের জরিমানা দিয়েও গৃহবধূ ঘরছাড়া
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে গ্রাম সালিসের নামে জরিমানা আদায় যেন কিছুতেই থামছে না। অসাধু কিছু মাতবর আইন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে জরিমানা আদায়ের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনই এক বিচারের শিকার হয়েছেন কষবা গ্রামের এক গৃহবধূ ও মুদি দোকানদার। পরকীয়া প্রেমের অপরাধে দুজনকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করেছেন গ্রাম মাতবর বিচার উদ্দীন ও ইউপি সদস্যসহ কতিপয় মাতবর। জরিমানা পরিশোধে রাজি হলেও অভিযুক্ত গৃহবধূ এখন স্বামী সংসার থেকে বিতাড়িত।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, ধানখোলা ইউনিয়নের কষবা গ্রামের মুদি দোকানি রাফিউল ইসলামের সাথে প্রতিবেশী ৫ সন্তানের জননীর পরকীয়া সম্পর্ক হয়। গত ১১ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে রাফিউলের বাড়ির পাশে ঝোড়ের মধ্যে দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের দাবি করেন গ্রাম মাতবর বিল্লাল হোসেন বিচার ওরফে বিচার উদ্দীনের ছেলে লাল চাঁদসহ কতিপয় যুবক। পরকীয়া প্রেম ও ব্যাভিচারের অভিযোগে ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার স্বামী। রাফিউলও আত্মগোপন করে। জনশ্রুতি রয়েছে ওই রাতেই দুজনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে লাল চাঁদসহ তার সঙ্গীরা রাফিউলকে পালাতে সহায়তা করে।
এদিকে ঘটনা যায় হোক বিচারের জন্য উঠেপড়ে মাঠে নেমে পড়েন গ্রাম মাতবররা। বিচার উদ্দীন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাফিউলের পক্ষে বিচারের রায় দেবেন বলে গুঞ্জন ওঠে। উভয় পক্ষকে চাপ দিয়ে জোরপূর্বক বিচারে বসাতে বাধ্য করেন গ্রাম্য মাতবররা। সোমবার রাতে গ্রামের তেঁতুলতলা মোড়ে সালিস বসে। বিল্লাল হোসেন বিচার, ইউপি সদস্য লিলু, সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর মীর, গোলাম বিশ^াস, মোজাম মহুরা ও ভাটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক হাসান আলীসহ গ্রামের মাতবররা সালিস করেন। ওই নারীর স্বামী সাফ জানিয়ে দেন তিনি স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেবেন না। তালাক দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এদিকে সালিসে উপস্থিত রাফিউল ও তার পরকীয়া প্রেমিকা গৃহবধূ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গৃহবধূ তার পরিবারে ফেরার আকুতি জানান। তাদের মাঝে কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সালিসপতিরা দুজনকে অভিযুক্ত করে অর্থদ- করার সিদ্ধান্ত দেন। রাফিউলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। সালিসেই ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকি ৪০ হাজার টাকা ১৫ দিনের মধ্যে দেয়ার অঙ্গীকার করেন রাফিউল। গৃহবধূর স্বামী তার নামে ৮ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি দিয়েছিলেন অনেক আগেই। ওই জমি স্বামীর নামে ফিরিয়ে দেয়ারও সাজা দেন সমাজপতিরা।
স্থানীয় বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, কষবা গ্রামের ওই সালিশপতিদের কয়েকজন জরিমানার ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। কারো কোনো সমস্যা হলেই এগিয়ে যান তারা। সামাজিক বিচারের নামে জোরপূর্বক আদায় করা হয় জরিমানা। ওই টাকা সালিসপতিরা পকেটস্থ করেন। যার প্রতিফলন ঘটেছে রফিউল এবং ওই গৃহবধূর বিচারে।
জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার বিকেলে রাফিউল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামে বাস করতে হলে সালিস মানতে হবে। টাকা না দিলে তো ওরা গ্রামে বাস করতে দেবে না। এদিকে ঘরছাড়া ওই গৃহবধূ গ্রামের একটি বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন মাতবরকে তিনি কিছু টাকা দিয়েছেন। তারা স্বামীর ঘরে তাকে ফিরিয়ে দেবে এমন আশায় অপেক্ষা করছেন তিনি।
এদিকে কষবা গ্রামের সামাজিক বিচারের নামের ওই অবিচারের বিষয়ে বিভন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পরকীয়া প্রেম, ব্যাভিচার কিংবা যদি ধর্ষণ হয়ে থাকে তাহলে তার বিচার গ্রাম্য সালিসে কিভাবে করা যায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামের অনেকেই। সালিসকারী মাতবরদেরই বিচার দাবি করেছেন গ্রামের আপামর জনতা। কিন্তু মাতবরদের ভয়ে তারা কেউ অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টিতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ দিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।