মেহেরপুরে হাট-বাজারগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন

 

নির্ধারিত দরে বিক্রি ও ক্রয় মূল্যের ক্যাশ মেমো প্রদর্শনের নির্দেশ

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরের হাট-বাজারগুলোতে ব্যবসায়ী সমিতির বেধে দেয়া দর মানছেন না ব্যবসায়ীরা। রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রতিটি পণ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে দর নির্ধারণ করে মেহেরপুর তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতি। অপরদিকে পণ্য ক্রয়ের ক্যাশ মেমো প্রদর্শন বাধ্যতামূলক হলেও তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। তবে যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন।

মেহেরপুর তহবার ব্যবসায়ী সমিতি পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের বিষয়ে দর নির্ধারণ করে। সেনুযায়ী গরু ও মোষের মাংস প্রতিকেজি বিক্রয় মূল্য ৩৮০ টাকা, খাসির মাংস ৫০০ টাকা, ছাগলের মাংস ৪৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৫০-৩৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ক্রয়মূল্য থেকে ১০ টাকা লাভে বিক্রি ও সোনালী মুরগি ১৯০-২০০ টাকা।

গত কয়েকদিন মেহেরপুর, গাংনী, বামন্দী ও কেদারগঞ্জ বাজারে ব্যবসায়ী সমিতি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এসব পণ্যের বেশির ভাগ বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৪০০ টাকা, খাসির মাংস ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি ও ব্রয়লার মুরগি নির্ধারিত দর ঠিক থাকলেও লেয়ার বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি দরে। মাংস বিক্রেতাদের দাবি যেদিন তারা বেশি দরে গরু, ছাগল ও মোষ কেনেন সেদিন বাধ্য হয়ে বেশি দরে বিক্রি করতে হয়।

এদিকে মাছের বাজারেও ইচ্ছেমতো দরে বেচাকেনা হচ্ছে। ইলিশ মাছ কেজিতে ২০ টাকা ও অন্য মাছ কেজিতে ১০-১৫ টাকা লাভের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতরা। বেশি দরে কেনার কথা বলে চড়া দরেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। পাইকার আড়ত থেকে মাছ কেনার মেমো দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।

জেলার বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসান, ক্যাব সভাপতি রফিকুল আলম ও জেলা মার্কেটিং অফিসার। পরিদর্শনে বেরিয়ে আসে এসব অসঙ্গতি। গাংনী বাজারের মাছ ও মাংসের বাজার পরির্দশনের সময় চড়া দরে বিক্রির বিষয়টি উঠে আসে। মাছ বিক্রেতরা পাইকারি কেনার ক্যাশ মেমো দেখাতে ব্যর্থ হন। এছাড়াও মাছ, মাংসসহ কোনো পণ্যের দোকানেই মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ ক্রেতাদের নির্ধারিত দর সম্পর্কে জানা-বোঝার সুযোগ নেই। দর যাচাই করতে গেলেও ব্যবসায়ীদের সাথে সাধারণ ক্রেতাদের তিক্ততা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান বলেন, বাজার ঘুরে কিছু কিছু পণ্যে বিক্রির দর ঠিকঠাক পাওয়া গেলেও মাছ ও মাংস বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ব্যবসায়ীদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এর পরেও যদি তারা বাড়তি দরে মাছ-মাংস বিক্রি করে তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পণ্য কেনার ক্যাশ মেমো গ্রহণ বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যদি কোনো ক্রেতা পাইকারি কেনার ক্যাশ মেমো দেখতে চান তাহলে তা প্রদর্শন করতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন বাজারে অনেকটাই পানির দরে বিক্রি হচ্ছে নানান রকম শাক-সবজি। ব্যবসায়ী সমিতির বেধে দেয়ার দরের চেয়েও কম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। একই সময়ে বিপুল পরিমাণ সবজি আমদানি ও বাইরের জেলায় চাহিদা কম থাকায় সবজির এই দূরবস্থা বলে জানান সবজি বিক্রেতারা।

সবজির দর কম থাকলেও চাল, ডাল, তেল ও চিনির দর কিছুটা বাড়তির দিকে। বেশি দরে কেনার অজুহাতে চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়। চালেরও একই অবস্থা। রমজানের শুরুতেই বাজারে বিভিন্ন জাতের চাউলের দর কেজিতে ২-৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রেও বিক্রেতারা কেনার ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করছেন না। এ নিয়ে ক্রেতাবিক্রেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা সৃষ্টি হচ্ছে।

ক্রেতারা জানানা, বাজার মনিটরিং ও পণ্য প্রাপ্তির নিশ্চিয়তার কারণে অন্য বছরের রমজানের চেয়ে এবারে পণ্য মূল্য অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দর আকাশচুম্বি হলেও বেশির ভাগ পণ্যের দর রয়েছে স্বাভাবিক। জেলায় আসা পণ্যেগুলোর উৎস স্থানগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে বাড়তি দরে বিক্রি করা পণ্যের দরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই শুধু জেলায় নয় দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার ও প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্রেতাভোক্তারা।