মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত যুবলীগ কর্মীদের গ্রামে শোকের মাতম : পাঁচজনের পাশাপাশি কবরে দাফন

 

শেখ সফি: বাসের সাথে নসিমনের সংঘর্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের ৬ যুবলীগকর্মী নিহতের ঘটনায় গ্রামে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা শোকে মুহ্যমান। অন্যদিকে ছয় ছয়টি তরতাজা প্রাণ হারানোর ঘটনা গোটা এলাকার মানুষ যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। হাজারো মানুষ চোখের জল ফেলে তাদের শেষ বিদায় দিয়েছে। গ্রামের একটি কবরস্থানে ৫ জনকে পাশাপাশি কবর দেয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে জেলা শহর থেকে শ্যালোইঞ্জিনচালিত নসিমনযোগে বাড়ি ফেরার পথে মেহেরপুর-মুজিবনগর উপজেলার চকশ্যামনগর নামক স্থানে পিকনিকের বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত ও একই গ্রামের আরো ১৩ জন আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে নিহত ছয়জনের লাশ অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসযোগে মেহেরপুর সদর হাসপাতাল থেকে বাগোয়ান গ্রামে নেয়া হয়। সেখানে আগেই উপস্থিত ছিলেন নিহতদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ এলাকার হাজারো মানুষ। গতকাল ঘটনার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা ভাসছিলেন কান্নার সাগরে। লাশ পৌঁছুনোর পর তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এক হৃদয় বিদারক পরিবেশে উপস্থিত কেউ-ই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কেউ হারিয়েছেন স্বামী কিংবা পিতা, আবার কেউ হারিয়েছেন সন্তান। নিহত ছয় জনের মধ্যে কেউ কেউ ছিলো পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি। তাইতো তাদের পরিবারের সদস্যরা যেন অথই সাগরে পড়েছেন। শুধু বাগোয়ান গ্রামই নয়, আশেপাশের কোনো গ্রামেই মানুষ একসাথে এতো লাশের মিছিল দেখেননি।

দুপুরে বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একই সাথে ছয় জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মুসল্লি। জানাজায় ইমামতি করেন কুষ্টিয়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি মাসুদ শেখ। পরে ৫ জনকে বাগোয়ান পাঠানপাড়া কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়। বকসপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয় নিহত সোহরাব হোসেনকে। এর আগে হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রাম নিয়ে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন ও যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান।

জানাজায় অংশ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ অধ্যাপক সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, মুজিবনগর থানার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলুসহ নেতৃবৃন্দ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, দুর্ঘটনাস্থলে নিহত হন বাগোয়ান গ্রামের যুবলীগ কর্মী আনিছুর রহমান (৪০)। নসিমনের ১৫ যাত্রীকে গুরুতর আহতাবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে নাজমুল হোসেন (৩৫), টুকু মিয়া (২৮) ও তুফান হোসেনকে (৩৫) মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে রাজশাহী ও ২ জনকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে নাটোরে পৌঁছুলে সোহরাব (৩৫) ও সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহীর পুঠিয়ায় মিঠুনের (৩০) মৃত্যু হয়।