মেহেরপুরে সরকারি কোষাগার থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা প্রদান

মেহেরপুর অফিস: নীতিমালা উপেক্ষা করে সরকারি কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা দিলেন মেহেরপুর জেলা ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কাশেম। নিয়মিত কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় তিনি খণ্ডকালীন দায়িত্বে পালন করতে এসে সম্প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বিলে বড় ধরনের ঘাপলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি কোষাগার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ড রক্ষক যখন ভক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেকেই। এ নিয়ে জেলার অফিসপাড়ায় চলছে ব্যাপক তোলপাড়।
মেহেরপুর জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এবিএম শামসুদ্দীন আহম্মেদ গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর ছুটিতে গেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কাশেম খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিকালীন অথবা অনুপস্থিতকালীন সময়ে যিনি দায়িত্বে থাকবেন তিনি শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক করবেন। নিয়মিত কর্মকর্তা যে সকল বিল, বেতন নির্ধারণ ইত্যাদি কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন বা আপত্তি দিয়েছেন তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী শতভাগ নিয়মিত করণ ব্যতীত পরিশোধ ও সম্পাদন করতে পারেন না। এ নীতিমালার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খণ্ডকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কাশেম সরকারের রাজকোষের লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে প্রদান করেছেন।
মেহেরপুর জেলা যুবউন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক (চ.দা.) মাসুদুল হাসান মালিক ৫ম গ্রেডে সিলেকশন গ্রেড স্কেল প্রাপ্য নয় মর্মে খুলনা বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক অফিসের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তথাপিও ২২,২৫০-৩১,২৫০ টাকা সিলেকশন গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করে গত ১৫ ডিসেম্বর (চেক নং-ঘ ৪৫৮১৪৭ ও ৪৫৮১৪৮) মাধ্যমে যথাক্রমে ১ লাখ ৪ হাজার ৩২৩ এবং ১৩ হাজার ৪৯৮ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
একই দফতরের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক মোস্তফা জামান উচ্চমান সহকারী পদে ১ম টাইমস্কেল ৫ হাজার ৯০০-১৩ হাজার ১২৫ টাকা ১২ বছর পর প্রাপ্য হবে মর্মে খুলনা বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক অফিসের সিদ্ধান্ত রয়েছে। আদেশ অমান্য করে অবৈধভাবে তাকেও অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
২০১৩-১৪ সালে জাতীয়করণকৃত বেসরকারী রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেলে বেতন নির্ধারণ, চাকুরিকাল গণনা, ছুটি ইত্যাদির ক্ষেত্রে কনট্রোলার জেনারেল অব একাউন্টস (সিজিএ) কার্যালয় হতে সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না মর্মে খুলনা বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের সিদ্ধান্ত থাকা স্বত্বেও অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। পিডিপি-২ প্রকল্পের নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের টাইমস্কেল, ছুটির হিসাব, পেনশন কেস নিস্পত্তির বিষয়ে চাকুরিতে প্রকল্পের মাধ্যমে যোগদানের তারিখ নাকি রাজস্ব খাতে পদ সৃজনের মাধ্যমে স্থানান্তরের তারিখ ৩১ জুলাই ২০০৭ হতে চাকুরি গণনা করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি অথচ অবৈধভাবে এসব বেতন নির্ধারণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ২১ আগস্ট ২০১৫ তারিখের এক পত্রের প্রেক্ষিতে এবং অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখের পত্রে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় যে, উন্নয়ন প্রকল্পের চাকুরি হতে রাজস্ব বাজেটের পদে পদস্থ হওয়ার দিন পর্যন্ত সময়ের চাকুরি কাল উন্নয়ন প্রকল্পের চাকুরি কাল হিসেবে গণ্য হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের চাকুরিকালে টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেডস্কেল প্রাপ্য নয় মর্মে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্পের চাকুরিকালে টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড স্কেলে বেতন নির্ধারণ ও অনুমোদন করে যুবউন্নয়ন, সমাজসেবা, শিশু পরিবার, শহর সমাজসেবা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, এলজিইডি, প্রাণিসম্পদ, পিডিপি-২ সহ জেলা, উপজেলা অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
অনুরূপভাবে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মচারী কল্পনা বিশ্বাস, আবুল কাশেমসহ বিভিন্ন অফিসের পেনশন কেস চূড়ান্ত করা হয়েছে। এলজিডিই কর্মচারী জাহিদুর রহমান জোয়ার্দ্দারের স্ত্রী সরকারি কর্মচারী। বিধায় ফেনীতে তিনি কখনো অবস্থান করেননি। জাহিদুর রহমান জোয়ার্দ্দার তার বদলি ভ্রমণ বিলে স্ত্রীর ভ্রমণ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে ১৫ হাজার টাকার স্থলে ২৫ হাজার টাকা দাবিকৃত বিল অনিয়মের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।।
এখানে উল্লেখ্য যে, কথিত স্বল্পতম সময়ে মেহেরপুর জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে রাত-দিন খোলা রেখে কাজ করা হতো। অর্থাৎ আবুল কাশেমের দায়িত্বকালীন ওই কয়দিন দিনরাত কাজের মাধ্যমে তিনি উপরোক্ত অর্থ পরিশোধ করেছেন। এ ব্যাপারে বর্তমান নিয়মিত জেলা হিসাব সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবিএম শামসুদ্দীন আহমেদকে জানতে চাইলে, তিনি কোনো মন্তব্য না করে বলেছেন যে ছুটিতে যাওয়ার সময় অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্টসহ সমস্ত অডিটরদের বলে গিয়েছিলাম আপত্তিকর কোনো বিল পাস না করার জন্য।
এদিকে জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর খলিল যশোর ও হারুন মল্লিক মাগুরা থেকে অসদাচরণের দায়ে বদলি করে অতি সম্প্রতি এখানে এসেছেন। এ দুজন যোগ দিয়েছিলেন খণ্ডকালীন দায়িত্বে থাকা আবুল কাশেমের সাথে। ফলশ্রুতিতে সরকারের রাজকোষ থেকে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত আবুল কাশেম।