মেহেরপুরে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল আটকের ২৪ দিনের অভিযানে ৬৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয়

 

 

মাজেদুল হক মানিক: অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল আটক অভিযানের ২৪ দিনে মেহেরপুরে ৬৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। মোটরসাইকেলের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ও ড্রাইভিং লাইসেন্স খাতে এ অর্থ জমা হয়েছে বলে বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে। অভিযান অব্যাহত থাকলে জেলায় এ খাত থেকে আরো ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের যেক’টি জেলায় অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি তার মধ্যে মেহেরপুর জেলা অন্যতম। চায়না কোম্পানির সস্তা মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে আড়াই লাখ কিংবা তার ওপরের মূল্যের মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন অনেকেই। দাম যাই হোক বেশিরভাগ মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট ফাঁকা। কেনা থেকে শুরু করে ১০-১৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো হয়নি নিবন্ধন। আবার কিছু কিছু মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটে সাংবাদিক, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা, মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন, সরকারি বিভিন্ন অফিসের নামসহ নানান নাম লেখা চোখে পড়ে। নিবন্ধন না করেই ওই নাম ব্যবহার করে হরহামেশা মোটরসাইকেল চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সার্কেল ও মেহেরপুর পুলিশ যৌথ উদ্যোগ নিয়ে মোটরসাইকেল আটক অভিযান শুরু করে। গত ২৬ মে থেকে জেলার অন্তত ২০টি স্থানে সড়কের ওপরে এ অভিযান শুরু হলে বিপাকে পড়েন অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল মালিকরা। অভিযানে শতাধিক মোটরসাইকেল আটক করা হয়। অবশ্য নিবন্ধন পূর্বক বেশিরভাগ মোটরসাইকেল মালিককে ফেরত দেয় পুলিশ। এখনো চলছে ওই অভিযান। অভিযানে শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানবাহনও আটক করা হচ্ছে। পুলিশি চেকিং থেকে বাঁচতে মোটরসাইকেল মালিকরা নিবন্ধনের জন্য ছুটছেন বিআরটিএ’তে।

অভিযানের তৃতীয় দিন থেকেই মোটরসাইকেল নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য ভিড় বাড়ে মেহেরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে। প্রতিদিনই নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়। বিআরটিএ চুয়াডঙ্গা-মেহেরপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক সুব্রত দেবনাথ জানান, গত ২৬ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত এখাতে ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩০ টাকা জমা পড়েছে। যা বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন তিনি। কেননা মেহেরপুর জেলায় এখাতে প্রতি বছর মাত্র ২০-২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় আসে। জেলায় এখনো তিন হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে। এগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে ছয় কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। তবে এমন অভিযান অব্যাহত রাখা গেলে অচিরেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম জানান, জেলার সড়কগুলোতে বিপুল সংখ্যক অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল চলাচল করছিলো। এতে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো। অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলযোগে ক্রাইম করলে তাদের সহজেই ধরা যায় না। আবার মোটরসাইকেল চুরির পরিমাণ যেমন বাড়ে তেমনই চুরি হওয়া মোটরসাইকেল ক্রেতা-বিক্রেতারা উৎসাহিত হয়। অন্যদিকে যেহেতু জেলার বিরাট একটি অংশ ভারতীয় সীমানা।তাই ওপার থেকে মোটরসাইকেল এনে ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই মোটরসাইকেলযোগে অপরাধ কমানো, চুরি প্রতিরোধ এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান তিনি। এদিকে অভিযানের শুরুতেই আটক মোটরসাইকেল ছাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি সুপারিশ করেছেন। তবে তেমন কোনো সুপারিশ কর্ণপাত করছে না পুলিশ। তাই বাধ্য হয়ে নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে প্রতিদিনই বিআরটিএ অফিসে বাড়ছে ভিড়।