মেহেরপুরের বন্দরে পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র : শতাধিক গুলি টিয়ারসেল নিক্ষেপ : গুলিবিদ্ধ ৪

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের বন্দর এলাকায় পুলিশ-বিজিবির সাথে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে অবরোধকালে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ-বিজিবি শতাধিক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে জামায়াতের ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এলাকায় বিরাজ করছে আতঙ্ক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড রায় বাতিলের দাবিতে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর এলাকায় অবরোধ করে জামায়াত-শিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এ সময় মুজিবনগর থেকে মেহেরপুরগামী সবজি বোঝাই একটি ট্রাক ঘটনাস্থলে এলে অবরোধের কবলে পড়ে। অবরোধকারীরা ট্রাকটিতে আগুন দেয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। ট্রাকটি উদ্ধার করতে গেলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ পিছু হঁটতে বাধ্য হয়। এক পর্যায়ে অবরোধকারীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। পরে মেহেরপুর শহর থেকে পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান। শুরু হয় সংঘর্ষ। এরই মাঝে পুলিশের সাথে যোগ দেন বিজিবি সদস্যরা। অবরোধকারীরা বন্দর মোড় থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন শ্মশানঘাট মোড়ে। অবরোধকারীদের সড়ক ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হ্যান্ডমাইকে আহ্বান জানান বিজিবি কর্মকর্তারা। কিন্তু ব্যর্থ হয় সে আহ্বান। পুলিশের পাল্টা গুলি শুরু হয়। অবরোধকারীরা ইটপাটকেলের পাশাপাশি ককটেল নিক্ষেপ করে। দু ঘণ্টাব্যাপি সংঘর্ষের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ সময় জামায়াত-শিবিরের ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এরা হচ্ছেন বন্দর গ্রামের আব্দুল গফুরের নাতি স্বপন (১২) ও আব্দুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন (২৪), চকশ্যামনগর গ্রামের জহির উদ্দীনের ছেলে সোহেল রানা (১৫) ও আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে তুহিন হোসেন (৩২)। স্বপনের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুচবাড়িয়া গ্রামে। তার পিতার নাম মনিরুল ইসলাম। নানা বাড়ি বেড়াতে এসে সংঘর্ষে পড়ে। ঘটনার পর স্বপনকে একটি মোটরসাইকেলযোগে কুষ্টিয়ায় নেয়ার পথে বামন্দী বাজারে স্থানীয় মানুষের হাতে ধরা পড়ে। গাংনীর জোড়পুকুরিয়া বাজারের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেলটি যেতে দেখে মানুষের সন্দেহ হলে বামন্দী বাজারের লোকজনের কাছে খবর দেয়। বামন্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকজন মোটরসাইকেলটি থামায়। এ সময় মোটরসাইকেল ও স্বপনকে ফেলে দু যুবক পালিয়ে যায়। পরে বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা স্বপনকে উদ্ধার করে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির ছররা বিদ্ধ হয়েছে। আহত অন্যদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সংঘর্ষের সময় অবরোধকারীদের ককটেল নিক্ষেপ ও পুলিশের গুলিতে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শর্টগানের ৬৪ রাউন্ড, চায়নিজ রাইফেলের ২৭ রাউন্ড গুলি এবং ২৬টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। একই সময়ে বিজিবির পক্ষ থেকে চাইনিজ রাইফেলের ৮ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেকোনো প্রকার নাশকতা মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়কে টহল জোরদার করা হয়েছে। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানান তিনি।