মেহেরপুরের চাকরিজীবীদের নিকট মোবাইলফোনে চাঁদা দাবি : জনমনে আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার: দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাভিশন’র মেহেরপুর প্রতিনিধি আবু লায়েচ লাবলুর নিকট মোবাইলফোনে চাঁদা দাবি করার মাত্র একদিন পর মেহেরপুরে গণহারে চাঁদা দাবি করেছে কমিউনিস্ট পার্টির লোকজন। এ ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেলেও কেউ থানায় সাধারণ ডায়েরি করার সাহস পাচ্ছে না।

আতঙ্কিত অনেকেই জানিয়েছেন, নিজেকে কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান বিকাশ বড়ুয়া পরিচয় দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদাবাজদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলো ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ ট্যাকিঙ করে ধরতে পারছে না পুলিশ। ওই সব মোবাইল নম্বর থেকে এক লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করার কথা শোনা গেছে। দাবিকৃত টাকা না দিলে তারা শিশু সন্তান তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও চাকরিজীবীদের খুন করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তবে তাদের চাঁদা চাওয়ার ধরনটা অভিনব কৌশল বলেও জানিয়েছেন অনেকে।            মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, অজ্ঞাত স্থান থেকে চাঁদাবাজরা নিজেকে সেনা অফিসার পরিচয় দিয়ে মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে সব অফিসারের নম্বর সংগ্রহ করে। পরে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি দিয়ে দর কষাকষি করতে থাকে। চাঁদা দেয়া না হলে শিশুসন্তান তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, তার কাছে ছাড়াও চাঁদাবাজরা মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামান, গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আফিলউদ্দিন, সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মনোয়ার হোসেন, আবুল ফজল, সৈয়দ মাসুদুল ইসলাম ও মহিউদ্দিনের নিকট চাঁদা দাবি করেছে।

এদিকে মেহেরপুর মেঘনা লাইফের কর্মচারী গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের আবু নাতেক জানান, চাঁদাবাজরা একই পরিচয় দিয়ে দল চালাবার নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে। তিনি আরো জানান, চাঁদাবাজরা মেহেরপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা. এম এ বাশার, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মচারী মোশারফ হোসেনের নিকট চাঁদা দাবি করেছে। তিনি বলেন, চাঁদাবাজ ফোন করে ফোন গাইড বানানোর নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইলফোন নম্বর সংগ্রহ করে। পরে সংগ্রহ করা ওই সব নম্বরে ফোন করে চাঁদা দাবি করেছে। এসব ঘটনার পর গ্রামের মানুষের মতো শহরের লোকজনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। অনেকে আছেন যারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে অনেকেই বলেছেন তারা থানায় জিড়ি করবেন।

এদিকে মেহেরপুর সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার এসআই আশরাফ জানান, গত রাত পর্যন্ত থানায় কেউ জিডি করতে আসেননি। তবে মেহেরপুর সদর থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম মাথাভাঙ্গাকে জানান, গত ২/৩ দিনে মেহেরপুর সদর থানায় ২/৩টি জিডি হয়েছে। উল্লেখিত মোবাইলফোন নম্বরগুলোর মালিকের নাম ঠিকানা জানতে নম্বরগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নাম ঠিকানা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত মাসের প্রথম সপ্তায় মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামে চাঁদার দাবিতে শিশু আতিউরকে অপহরণ করার সময় তার নানার ভাই নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম অপহরণকারীদের ছোঁড়া গুলি ও বোমার আঘাতে নিহত হন। প্রায় দু সপ্তা পর শিশু আতাউর উদ্ধার হলেও প্রায় ৫ লাখ টাকা অপহরণকারীদের দিতে হয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে চাঁদা দাবির ঘটনায় সাংবাদিক আবু লায়েচ লাবলু গত সোমবার মেহেরপুর সদর থানায় একটি জিডি করেছেন।