মেঘনায় ঝড়ের সুরেশ্বরগামী লঞ্চ ডুবি : লাশ আর লাশ : আহাজারি-আর্তনাদ

 

চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার : যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি পূর্বাভাস

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ বৃষ্টির জন্য অসহনীয় অপেক্ষার প্রহর পার করছে। গতপরশু রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি না ঝরিয়েই উড়ে গেছে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী আকাশের মেঘ। অনাবৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গার তাপমাপা যন্ত্রের পারদ তরতর করে উঠছে। অবশ্য গতপরশু ও গতকাল তাপমাপা যন্ত্রের পারদ খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। অপরদিকে মুন্সিগঞ্জেরগজারিয়া উপজেলার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে তিনশযাত্রীনিয়ে ডুবে গেছে একটি লঞ্চ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনাঘটে। এ ঘটনায় গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত শিশু ও নারীসহ ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করাহয়েছে।অপরদিকে বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে ৯ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

চুয়াডাঙ্গায় কবে বৃষ্টি হবে? আবওয়া অধিদফতর এ প্রশ্নের জবাব সরাসরি না দিয়ে বলেছে, যশোর ও কুষ্টিয় অঞ্চলসহ ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা বিরাজ করছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকালও যশোরে ৪১ দশমিক ৪ ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দুটিই স্বাভাবিকের চেয়ে ৬/৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে গেছে। ফলে তীব্র গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে এলাকার প্রাণিকূল। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বরিশালে ৩৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ডসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝড়সহ বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপটি হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর ও কুষ্টিয় অঞ্চলসহ ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাইজদিকোর্ট, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা দেশের উত্তরাংশে সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং সারদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে ।

মুন্সিগঞ্জেরগজারিয়া উপজেলার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে তিনশযাত্রীনিয়ে ডুবে গেছে একটি লঞ্চ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনাঘটে। এ ঘটনায় গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত শিশু ও নারীসহ ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করাহয়েছে। নিহতদের কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়া জীবিত অবস্থায় তীরে উঠতেপেরেছেন আরও অর্ধশতাধিক যাত্রী। শরীয়তপুরের সুরেশ্বরের উদ্দেশে দুপুর ১টারদিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি মিরাজ-৪ নামের ওই লঞ্চটি ছেড়ে আসে।এদিকেউদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ও দুর্বারসন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে৮০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকা লঞ্চটি শনাক্ত করে। এরপরই শুরু হয়উদ্ধার তত্পরতা। লঞ্চ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাত্রীরা দাবি করেছেন- অতিরিক্তযাত্রী বোঝাই ও লঞ্চ চালকের ভুলের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। লঞ্চডুবির ঘটনাতদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। কমিটিকে সাত দিনেরমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।মুন্সিগঞ্জেরমেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিরঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত দেড় শতাধিকযাত্রী। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরগ্রামের জালাল শিকদার (৫৫), তার ছেলে আবিদ শিকদার (২৮), পাঁচগাঁও  গ্রামেরটুম্পা বেগম (২৬), তার ছেলে মাহি (২), রাহাপাড়া গ্রামের সুমনা (৮) ও সেতারাবেগম (৫০), দক্ষিণ হারিসা গ্রামের শিক মালয় (৪২), পরিসার গ্রামের মাহি (৪), সুরেশ্বর গ্রামের ২ বছরের শিশু আরিফ। বাকি ৩ জনের মধ্যে ২ জন মহিলা ও১ জন পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশগুলো দৌলতপুরের মেঘনা নদী পাড়েপুলিশের হেফাজতে রাখা ছিলো।

গজারিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সিদ্দিকুর রহমানজানান, এমভি মিরাজ-৪ নামের লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট থেকে দুপুর দেড়টার দিকেশরীয়তপুরের সুরেশ্বরে যাচ্ছিলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকেমুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। এতে দুশতাধিক যাত্রী ছিলেন। এ ঘটনার পর সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৯টি ওসন্ধ্যার পর আরও ২টি মরদেহ নদীতে ভেসে ওঠে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকেনারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতাশুরু করে। লঞ্চের ৫০ এর অধিক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ রয়েছে দেড়শতাধিক যাত্রী।

গজারিয়া উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামেরমেঘনা পাড়ে চলছে স্বজনদের আহাজারি-আর্তনাদ। লঞ্চের ভেতর থেকে কেউ সাঁতরিয়েতীরে উঠতে পারলেও অনেকেই লঞ্চের সাথে তলিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তীরে ফিরেআসা যাত্রীরা। লঞ্চের যাত্রী আলেয়া বেগম (২৭) বেঁচে গেছেন ভাগ্যক্রমে।কিন্তু তার পরিবারের ৭ সদস্য এখন লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন। স্বজনদেরহারিয়ে আলেয়া বেগম এখন বাকরুদ্ধ। মেঘনা নদীতে তার স্বজনদের ট্রলারে করেখুঁজছেন পাগলের মতো।

বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যুহয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রবল বর্ষণের সাথে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।বরিশালেরবাবুগঞ্জে আলী ফকির (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকালবৃহস্পতিবার বিকেল৩টার দিকে প্রবল বর্ষণ শুরু হলে আমতলা নামক স্থানে একটি গাছের নিচেআশ্রয় নেন আলী ফকির। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া বরিশাল সদর এলাকার আজাদ (১৭) নামে এক মাদরাসাছাত্র বজ্রপাতে নিহত হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝালকাঠিতে বজ্রপাতের কবলে পড়ে দু কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।সদরউপজেলার গাভারাম চন্দ্রপুর ইউপির বালিগোনা গ্রামে মাঠে কাজ করতে গিয়েবজ্রপাতে মারা যান কৃষক আশরাফ আলী (৫৫)। এছাড়া কাঁঠালিয়া উপজেলারআওড়াবুনিয়ার ছিটকী গ্রামের সাহিদুল ইসলাম হাওলাদার (২৫) মাঠে গরু আনতে গিয়েবজ্রপাতের কবলে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।একই সময়ে ভোলারদৌলতখান উপজেলায় বজ্রপাতে মনির হোসেন (১৭) এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।উপজেলার জয়নগর গ্রামে মো. ইয়াছিনের ছেলে মনির মাঠে কাজ করার সময় হঠাতবজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাগেরহাটে রাজেব গ্রামে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছেন।

দৌলতখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খাইরুল কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।গোপালগঞ্জেরকোটালীপাড়ায় বজ্রপাতের শব্দে তপতী বাড়ৈ (৫৫) নামে এক মহিলা নিহত হয়েছেন।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘরের মধ্যে থাকা ওই মহিলা বজ্রপাতের শব্দেহৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জউপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে বজ্রপাতে জান্নাত (৮) নামে একশিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝড়বৃষ্টির সময় এ বজ্রপাতের ঘটনাঘটলে তার মৃত্যু হয়। জান্নাত শ্রীরামপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের মেয়ে।