মেকআপ মানেই সর্বনাশ ডেকে আনা

রং ফর্সা করা ক্রিম ভেষজ সাময়িক ফ্যাঁকাসে করলেও বাড়ে রোগের ঝুঁকি!

 

খাইরুজ্জামান সেতু/সেলিনা জামান: রং ফর্সা করা ক্রিমে ফর্সা করে না। সাময়িক ফ্যাঁকাসে করলেও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চর্মরোগ দেখা দেয়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, এটা-ওটা মেখে ত্বক পরিচর্যার চেয়ে বেশি বেশি করে মরসুমি ফল-ফলারি খেলেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি না বুঝেই অনেকে বিউটি পার্লারে ও ঘরে বসে রাসায়নিক নানা পদের ক্রিমসহ বিভিন্ন ফল কেটে, বেটে মেখে ত্বকের সর্বনাশ ডেকে আনেন।

শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে নয়, সারাদেশেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে অসংখ্য বিউটি পার্লার। এসব পার্লারে নানাভাবে মহিলাদের রূপচর্চা করা হয়। কিছু সেলুনের দোকানে এখন পুরুষেরও রূপচর্চা শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ট্রেডলাইসেন্সধারী বিউটি পার্লারের সংখ্যা ১০টি হলেও বাস্তবে রয়েছে এর তিনগুন। শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলেও গড়ে উঠছে বিউটি পার্লার। বিয়ের সাজ? এখন আর বান্ধবী বা ভাবীদের ওপর নির্ভরশীলতা নয়, অধিকাংশ বিয়ের কনেকেই নেয়া হয় বিউটি পার্লারে। মেকআপের আবরণে ত্বকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় ভার হয়ে দাঁড়ায়।

বিউটি পার্লার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সচেতন নারীদের অনেকেই বলেছেন, নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন অবশ্যই শিল্প। সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে মুখোবয়বের সাথে মানান করে চুল কাটার জন্যও তো বিউটি পার্লার খুঁজতে হয়। পোশাক সচেতনতার জন্য অবশ্য নিজেকেই যত্নবান হতে হয়। কোন বয়সে গায়ের রঙের সাথে কোন বর্ণের পোশাক মানাবে তা জানতে বিউটি পার্লারের দরকার হয় না। আর ত্বকের পরিচর্যা? এখন তো কতো রকমের ক্রিম বের হয়েছে। কোন কোন পার্লারে রাসায়নিক ক্রিমের বদলে ভেষজ ক্রিমের ব্যবহার করা হয়। জানি না- এতে ক্ষতি কি-না। অনেকেই করে। দেখে দেখে অন্যরাও তাতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসিয়ালে আগ্রহী হয়ে উঠছে প্রায় সকলে। কারণ ওতে মুখের ত্বকটা পরিষ্কার হয়। চুয়াডাঙ্গায় পার্লার দেয়া বেশ কয়েকজন বিউটিশিয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রশ্ন তুলে বলেন, উপকার না হলে মেয়েরা কেন পার্লারে আসেন?

ফেসিয়াল, চুল কাটা, ভ্রু তোলা, হলুদ বেটে, মাল্টা কেটে মুখে দেয়ার উপকারিতা কতোটুকু? এসব জানতেই চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নেহেরুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রূপচর্চাকে কটাক্ষ না করলেও ত্বক চর্চাকে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসায়নিকই বলুন আর ভেষজই বলুন, ওসব দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা আনা যায় না। ওসবে সাময়িক ত্বকে কিছুটা ফ্যাঁকাসে ভাব ফুটে উঠলেও ক্যান্সার থেকে শুরু করে মেছতা, ব্রুনসহ বিকৃত ভাবই ফুটে ওঠে বেশি। মুখ লাল হয়ে যায়। আর ভ্রু তুলে চোখ ডাগা ডাগা ভাব করা? চোখের তো ক্ষতি হয়ই, ভ্রু মোটা শক্ত হয়ে সৌন্দর্যটাই কেড়ে নেয়। তাছাড়া ভ্রু তোলার কারণে ফুঁসকুড়িও দেখা দিলে মুখ লোকানোর মতো পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। মেকআপে সাময়িক সুন্দর দেখা গেলেও পরবর্তীতে তার বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন না এমন মানুষ বিরল। মুখে ডাল, ডিম, কমলার খোসা, ক্ষিরা দেয়া ঠিক নয়। ওতেও লাভের বদলে ক্ষতিই বেশি। আর হলুদ বাটা? তাতেও ক্ষতি। কম আর বেশি। উপকার কতোটুকু হয় তা যারা মাখেন তাদেরকেই খতিয়ে দেখা উচিত।

তাই বলে মুখে কিছুই মাখতে হবে না? শীতে যে চামড়া টান টান হয়ে ওঠে। শাদাটে রুক্ষভাবের চেহারা নিয়ে বাইরে যাওয়া যায়? এসব প্রশ্নের জবাবে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, শীতে ভালো সানস্ক্রিন জাতীয় কোল্ডক্রিমের চেয়ে গ্লিসারিন ভালো। অবশ্য গ্লিসারিন ব্যবহারের মাত্রাও থাকতে হবে খুবই সামান্য। এসব কিছুই লাগবে না, যদি নিয়ম করে বেশি বেশি দেশি মরসুমি ফল যেমন পেঁয়ারা, আমড়া, লেবু, কামরাঙ্গা খাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করলে অনেক সমস্যা দূর হয়। আর যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের তো ত্বকচর্চা মুখো হওয়াই উচিত নয়।

রূপচর্চাকে শিল্প বলা হলেও ত্বকচর্চাকে স্বাস্থ্য সচেতন কেউই ভালো চোখে দেখেন না। রূপ যেমনই হোক তা ফুটিয়ে তুলতে কেমিকেল ক্রিমের চেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ পোশাক সচেনতাই গুরুত্বপূর্ণ।