মুমূর্ষু অপু রহমানের মৃত্যু : হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার ৩

 

পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে মাথায় আঘাতের পর দুর্ঘটনা বলে জানানোর অভিযোগ

 

চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ির চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা আজিমুদ্দিনের বাড়ি ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার: দাদার মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় রহস্যজনকভাবে রক্তাক্ত জখম হয়ে মারা গেলেন অপু রহমান (৩০)। ঈদের একদিন আগের মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। পরদিন অর্থাৎ ঈদের আগের দিন বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। ঈদের দিন ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে। ওই দিনই দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার হাফিজুর রহমান হাপুর ছেলে অপু রহমান ছিলেন রেলবাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তার ভাই বাদী হয়ে হত্যামামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঈদের দিন রাতে অভিযান চালিয়ে দুজন এজাহারভুক্তসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- চুয়াডাঙ্গার ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে রকিবুল ইসলাম ওরফে রফিকুল (২৮), শুকুর আলীর ছেলে হানিফ (৩০) ও মসজিদপাড়ার মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে শফিকুল ইসলাম অপু (২৮)। গ্রেফতারের পর এদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেছে, ওইদিন রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অপু রহমান আহত হয় বলে শুনেছি। পুলিশ রাজ্জাকসহ তাদের সহযোগীদের হন্য হয়ে খুঁজছে। অপরদিকে সাতগাড়ির চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী আজিমুদ্দিন ও তার ছেলে শাহাজাহানের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে স্থানীয়রা। ঈদের পরদিন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আজিমুদ্দিনের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়াও ঈদের আগের দিন বিকেলে অপু রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে সাতগাড়িসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ সঙ্গবদ্ধ হয়ে রেলবাজারের রকিবুলের দোকানের সামনে অবস্থান নেয়। দীর্ঘ প্রায় দু ঘণ্টা অবরোধ করে। এ সময় দোকানের শার্টার বন্ধ করে অবস্থান নেয় দোকানিসহ দোকানের কর্মচারীরা।

জানা গেছে, অপুর রহমান রেলবাজারে গামেন্টেসের ব্যবসা করতেন। তার সাথে পাশের দোকানি রফিকুলের বিরোধ ছিলো। অপুর নিকটজনেরা জানিয়েছেন, ঈদের একদিন আগে অর্থাৎ রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজ্জাক ও রকিবুল ডেকে নেয় সাতগাড়িতে। ওরা চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা আজিমুদ্দিনের বাড়িতেও যায়। সাড়ে ১২টার দিকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় রাজ্জাক। সে জানায়, অপু রহমান মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে সাতগাড়ি মোড়ের অদূরবর্তী রাস্তার পাশের খেজুর গাছের সাথে ধাক্কা মারে। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। রাতেই খবর পেয়ে অপু রহমানের পিতাসহ নিকটজনেরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। অভিযোগ তুলে বলেন, অপু রহমানকে ডেকে নিয়ে সাতগাড়িতে মাথায় মেরে গুরুতর আহত করা হয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই দুর্ঘটনা বলে প্রচার করছে ওরা। অপু রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঈদের আগের দিন বিকেলে মারা যায়। ঈদের দিন ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। অপু রহমানের ভাই অভিযোগ করে বলেছেন, অপু রহমানকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মাথায় মেরে হত্যা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান বলেছেন, হত্যা মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই অপু রহমানের দাদা আব্দুস সামাদ ইন্তেকাল করেন। দাদার মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় অপু রহমানও মারা গেলেন। তিনি ইতালি প্রবাসী আলমঙ্গীর হোসেনের ভাতিজা। পিতার মৃত্যুর খবরে ইতালি থেকে ফেরার পথেই তিনি ভাতিজার মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েন। তিনি ভাতিজার প্রকৃত মৃত্যু রহস্য উন্মোচনে প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন। অপু রহমান ছিলেন এক সন্তানের জনক।