মুজিবনগরে পেঁয়াজের রোগ আর বাজার দরে কৃষক সর্বশান্ত

 

মহাসিন আলী/শেখ শফি: মেহেরপুর মুজিবনগরে গত বছরের দ্বিগুন পেঁয়াজচাষ হলেও বৈরি আবহাওয়া, পেঁয়াজের ডগা শুকিয়ে যাওয়া আর নাভিপঁচা রোগে সর্বশান্ত হতে বসেছেন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ এমন হবে যে আগামী বছর তারা পেঁয়াজচাষ করার নামটি মুখে আনবে না বলে মন্তব্য করেছেন এলাকা বহুচাষি। ক্ষতি কিছুটা কমাতে এলাকার কৃষক পেঁয়াজের মরসুমে এলসি বন্ধে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ ক্ষতির জন্য কৃষককে অনেকখানি দায়ী করেছেন।

এ বছর মুজিবনগর উপজেলায় ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে একশ’ ৯৫ হেক্টর কম। গত বছর এ উপজেলায় মাত্র ৬শ’ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিলো। এ বছর পেঁয়াজচাষের শুরুতে ৩ বার বৃষ্টিতে কৃষক জমিতে পেঁয়াজের বীজ বপন করলেও তা বারবার পঁচে নষ্ট হয়েছে। এরপরও উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাবমতে এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।

মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক মামুন জানান, তিনি ৫/৬ বছর ধরে পেঁয়াজচাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। বৈরি আবহাওয়ায় বাববার পেঁয়াজের বীজ পঁচে যাওয়ায় তিনি ইচ্ছা থাকা সত্বেও আরো ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে পারেননি। তিনি জানান, এ বছর পেঁয়াজের আগা মরা রোগ লেগেছে। এছাড়া নাভিপঁচা রোগে পেঁয়াজের এক ইঞ্চি ওপর থেকে গাছ ভেঙে মাটির সাথে পড়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিবিঘা জমিতে যেখানে একশ’ ৪০ মণ থেকে দেড়শ’ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হতো সেখানে এ বছর প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন আশা করতে পারছেন না। এর ওপর পেঁয়াজের বাজার ৪শ’ টাকা মণ বা তার কম। এতে তার কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত।

উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি শিরিল জানান, তিনি এ বছর ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজচাষ করেছেন। বৈরি আবহাওয়ার কারণে তিনি তার জমিতে ৩ বার পেঁয়াজের বীজ বপন করেছেন। সেচ, সার, বীজ ও লেবার খরচ সব মিলিয়ে তার প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রোগের কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ও পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর হিসেব করে তার প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতি হবে।

মানিকনগর গ্রামের পেঁয়াজচাষি শফি জানালেন, বেশি লাভের আশায় তিনি এবারও পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু ঘন কুয়াশায় পেঁয়াজের ডগা মরা রোগ ও নাভি পাঁচা রোগ তাদের সে আশার প্রদীপ প্রায় নিভিয়ে দিয়েছে। তিনি অন্যান্য পেঁয়াজচাষির মতো মনে করেন- সরকার পেঁয়াজ ওঠার মরসুমে এক থেকে ২ মাস পেঁয়াজের এলসি বন্ধ রাখলে দাম পেয়ে পেঁয়াজের ক্ষতি থেকে তারা কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি পেতেন।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানালেন, মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন মাঠের আবাদকৃত পেঁয়াজের রোগের নাম পার্পল ব্লচ। নাইট্রোজেন জাতীয় সার অতিরিক্ত ব্যবহারে এ রোগ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এ রোগের জন্য চাষিরা কম দায়ী নয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শ উপেক্ষা করে তারা রাতের আঁধারে ক্ষেতে মাত্রা অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ছিটিয়েছেন। যার ফল সুফল হিসেবে চাষিদের কাছে ধরা দেয়নি। তিনি আরো বলেন, ঘন কূয়াশার কারণে পেঁয়াজের ডগামরা রোগ একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে চাষিদের ক্ষেতে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিঁটাতে বলা হয়েছে। তিনি চাষিদের সাথে সুর মিলিয়ে আরো বলেন, সরকার পেঁয়াজের মরসুমে ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি না করলে এলাকার চাষি পেতেন পেঁয়াজের দাম। সাথে সাথে ঐতিহাসিক মুজিবনগরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে কয়েক মাস দেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো যেত।