মুজিবনগরের সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর পুত্র সন্তান প্রসব : মামলা হয়নি

 

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী অবশেষে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তবে বিকলাঙ্গ শিশুটি জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেছে। অন্যদিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত মদন মণ্ডল জামিন পেয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠলেও ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, অন্তঃসত্ত্বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরীর প্রসব বেদনা উঠলে গত মঙ্গলবার দুপুরে মুজিবনগরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। রাতে মেহেরপুরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয়। জন্ম নেয় বিকলাঙ্গ এক পুত্র সন্তান। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। একদিকে কুমারী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ধর্ষণের বিচার না পাওয়া অন্যদিকে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় হতাশ হড়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

প্রতিবেশী মদন মণ্ডলের বাড়িতে টিভি দেখতে যাওয়ার সুযোগে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে (১৭) জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে মদন মণ্ডলের বিরুদ্ধে। সে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিষয়টি জানাজানি হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় মদন মণ্ডলকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে মুজিবনগর থানা পুলিশ। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা না করায় মুজিবনগর থানা পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এ সোপর্দ করে। বিজ্ঞ বিচারক মদন মণ্ডলকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। গত মঙ্গলবার আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অপ্রাপ্ত বয়স্ক অন্তঃসত্ত্বা এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় মেহেরপুরের একজন আইনজীবীর সাথে। আইনি বিষয়ে তিনি বলেন, মদন মণ্ডলকে আদালতে প্রেরণের সময় পুলিশ যে প্রতিবেদন প্রদান করেছে তাতে উল্লেখ করা হয় মদন মণ্ডলের বাড়িতে টিভি দেখতে যাওয়ার সুবাদে একাকি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ না করতে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা দায়ের থেকে বিরত রাখে। পরবর্তীতে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। ২৪ এপ্রিল পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে মদন মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়।

মদন মণ্ডল গ্রেফতার পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও এখনো মামলা দায়ের না হওয়ার এলাকা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা আসলেই কি হুমকির মুখে না অন্য কোনো কারণে মামলা করছেন না তা নিয়েও এলাকায় সমালোচনা চলছে।

আইনজীবীদের মতে, যেহেতু বিষয়টি আমলযোগ্য অপরাধ তাই পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত মামলা রুজু করার বিধান রয়েছে। তাছাড়া ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা কিংবা ডিএনই পরীক্ষা করানো যেতো। তবে মুজিবনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান জানান, পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য থেকেই মদন মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ধর্ষিতার পরিবার মামলা করতে অপারগতা প্রকাশ করছে। তাই পুলিশের এর চেয়ে বেশি কি করার থাকতে পারে?