মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হচ্ছে তিন হাজার কর্মচারীর

 

চাকরিরত অবস্থায় চোরাইপথে সনদ যোগাড়ের অভিযোগ: তদন্ত প্রায় সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: চাকরিতে আবেদনের সময় যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেননি তারামুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন না। ইতোমধ্যেযারা নানা প্রক্রিয়ায় শুধু সনদের সুবাদে চাকরির বয়স বৃদ্ধির সুযোগনিয়েছেন-তাদের সনদ বাতিলসহ চাকরির সুবিধা বাতিল হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায়কমপক্ষে তিন হাজার কর্মচারীর সনদ ও চাকরির বয়সসহ অন্যান্য বাড়তি সুবিধাবাতিল হতে পারে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সচিবসহ কর্মচারী, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহনানা পেশার কর্মচারী রয়েছেন এ তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এসিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ-কালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী আইন সংশোধন করেমুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর অবসরের বয়স দু বছর বৃদ্ধি করে। এ সময়গণকর্মচারীদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। চাকরিকালেঘোষণা না দিলেও এ সময়ে এসে অনেকে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। বাগিয়েনেন মুক্তিযোদ্ধার সনদ। আর সুযোগ নেন বাড়তি দুই বছরের চাকরির সুবিধাযাতে আর্থিকভাবেও লাভবান হন অনেকে।

মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড়েরহিড়িক এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, জাতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে জানতেপারে অসংখ্য কর্মচারী ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ভুক্তহচ্ছেন এবং বয়স বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছেন। ২০১১ সালের ২২ জুন গোয়েন্দাসংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্যপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনাদেয়া হয়।

উল্লেখ করা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এককসিদ্ধান্তে কোনো সনদ ইস্যু বা বাতিল করতে পারে না। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধাকাউন্সিল ( জামুকা) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের যাচাই বাছাইশেষে সনদ দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধাকাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ ৮ জন এমপির মধ্যে এখনো চারজন মন্ত্রী।মুক্তিযোদ্ধাগণকর্মচারীর অবসরের বয়স বাড়ানোর পর ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীরকার্যালয়ের তত্কালীন সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জান একটি পরিপত্র জারি করেন।এতে চারটি শর্ত মেনে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর বয়স বৃদ্ধি কার্যকর করারকথা বলা হয়। এসব শর্ত হচ্ছে যারা চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকেমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন অথবা যাদের নাম মুক্তিবার্তায়প্রকাশিত হয়েছিল অথবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাদের নাম গেজেটে প্রকাশ হয়েছিলোঅথবা যাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা সনদরয়েছে। এ চারটির যেকোনো একটি শর্তে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ পান অনেকেইআর দু বছর অতিরিক্ত চাকরি করার সুবিধা ভোগ করতে থাকেন।

গত ৫জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্তহন আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি। তিনি গণকর্মচারী ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়েওভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অনুসন্ধান শুরু করেন। যদিও এ সময় জামুকা কার্যকর নেই।তবুও নিজ উদ্যোগে তিনি ইতোমধ্যে ১৫১ জন অমুক্তিযোদ্ধার মিথ্যা ঘোষণাদিয়ে নেয়া সনদ বাতিল করেছেন। জামুকার সিদ্ধান্তে দেয়া এসব সনদ মন্ত্রণালয়বাতিল করতে পারেন কি না- সে নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও কাজটিকে ভাল বলেছেনঅনেকেই।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গণকর্মচারীর মধ্যে থেকে ভুয়ামুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিতে এবার মন্ত্রণালয় নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশহিসেবে যারা চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণাদেননি তাদের সনদ বাতিল করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার অবসরের বয়সবৃদ্ধির সুযোগও বাতিল করে দেবে।

মন্ত্রণালয় বলছে, মুক্তিযোদ্ধারসনদ যাচাই বাছাই করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্যায়ন দেয়ার পরইকেবল কেউ মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর সুযোগ পেতে পারেন। কিন্তু বিভিন্নমন্ত্রণালয়, বিভাগ, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দপ্তর সংস্থা, করপোরেশন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজেরাইমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেককে চিহ্নিত করে বাড়তি বয়সের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এধরনের সুযোগ যারা নিয়েছেন অবিলম্বে তাদের সুযোগ রহিত করে সুযোগ সুবিধাবাতিলের চিঠি যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে।

মুক্তিযোদ্ধারসংজ্ঞা ঠিক হবে: জামুকার প্রথম বৈঠক আগামী ৬ আগস্ট। এদিন ঠিক হবেমুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা। স্বাধীনতার পর এ বিষয়টি স্পষ্ট না করায়মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশনিয়েছেন, লালমুক্তিবার্তায় যাদের নাম আছে, যারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধেসহযোগিতা করেছেন, যারা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ভাতা পেতেন, যারা অস্ত্র সমর্পণকরেছেন এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ঠিক করা হবে বলে জানাগেছে।