মায়ের জন্য কেনা শাড়িসহ খোকন হারালো কষ্টার্জিত টাকা

অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা বেপরোয়া : ফেরির সকল ফেরিওয়ালা নিরাপদ নয়

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিধবা মায়ের জন্য শাড়ি, সংসারের হাল টানা বড় ভাইয়ের জন্য দুটি লুঙ্গিসহ পরিবারের সকলের জন্যই কিছু না কিছু কিনে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন খোকন (১৮)। পথিমধ্যে কোচে বাদামের সাথে চেনতানাশক খাওয়ানোর পর ওইসব শাড়ি লুঙ্গিসহ কাছে থাকা মোবাইলফোন ও নগদ পাঁচ হাজার তিনশ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা।

অজ্ঞান হয়ে পড়ায় খোকন মাগুরায় নামতে পারেনি। সুমন ডিলাক্সের সুপার ভাইজার ও হেলপার তাকে গতকাল শনিবার সকালে নামিয়ে দেয় চুয়াডাঙ্গার একাডেমী মোড়ে। সেখানেই পড়েছিলো দীর্ঘক্ষণ। স্থানীয় কয়েকজন দোকান খোলার সময় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকা যুবককে দেখে ফায়ার স্টেশনে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সকাল ১০টার দিকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। চিকিৎসার এক পর্যায়ে বিকেলে খোকন তার ঠিকানা দেয়। তার দেয়া ঠিকানায় খবর দেয়া হলে নিকটজনেরা সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পৌঁছান। রাত আটটার দিকে খোকনকে নিয়ে তারা মাগুরার উদ্দেশে রওনা হন।

মাগুরার মোহাম্মদপুর চরপাড়ার মৃত মোবারক মণ্ডলের ছেলে খোকন ঢাকা মিরপুরের একটি সোয়েটার তৈরির কারখানায় চাকরি করেন। রোজার ঈদেও সে মাসহ পরিবারের আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। ঈদের পর তিনি কর্মস্থলে যান। গতপরশু তিনি ছুটি পান। মায়ের জন্য শাড়ি, ভাইয়ের জন্য লুঙ্গিসহ পরিবারের প্রত্যেকের জন্যই কিছু না কিছু কিনে ফিরছিলেন বাড়ি। গাবতলী থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী সুমন ডিলাক্সের একটি কোচে ওঠেন। পাটুরিয়া ঘাটে কোচ থেকে নামেন। ঘুরে ফিরে ফের কোচে ওঠেন। ফেরিতে বাদাম কেনেন। সেই বাদাম খেয়েই বেহুশ! পরে কী হয়েছে তা আর বলতে পারেননি খোকন। যখন খুললো চোখ, ফিরে পেলো চেতনা। দেখলো চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল।

খোকন বলেছে, দু মাসের বেতন আর অভারটাইম তথা অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে পাওয়া টাকার কিছু খরচ হয় শাড়ি আর লুঙ্গিসহ এটা ওটা কিনতে। অবশিষ্ট পাঁচ হাজার তিন টাকা ও মোবাইলফোন ছিলো পকেটে। সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টির এক সদস্য বিক্রি করা বাদামের সাথেই হয়তো মিশিয়েছিলো অজ্ঞান করা ওষুধ। মাদাম আর ঝাল মুখে দিতেই বেঘোরে ঘুম। এক সময় জ্ঞান হারা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে মাগুরার উদ্দেশে নেয়ার সময় খোকন দীর্ঘশ্বাস ছেলে বললো, ওরা আমার কষ্টটা বুঝলো না। নিয়ে গেলো আমার মায়ের শাড়িটাও।