মদপানের পর রুবিনাকে ডেকে নিয়ে জামাই সাদ্দামের অপকর্ম ॥ ভাগ বসায় শ্বশুর হুমায়ুন বাঙাল

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার স্কুলছাত্রী হত্যার নেপথ্য উন্মোচনে গোয়েন্দা পুলিশের অগ্রগতি ॥ শুকুরের স্বীকারোক্তি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার স্কুলছাত্রী রুবিনা হত্যার নেপথ্য এখন গোয়েন্দা পুলিশের নখদর্পণে। হকপাড়ার শুকুর আলী ইতোমধ্যেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ডও করা হয়েছে তার জবানবন্দি। প্রতিবেশী সুদ ব্যবসায়ী হুমায়ুন বাঙালের বাড়িতেই পালাক্রমে ধর্ষণের সময় প্রাণ হারায় ৫ম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা খাতুন।
‘ধর্ষণের আগে হুমায়ুন বাঙালের জামাই সাদ্দাম, শুকুর ও মানিক মাছপট্টিতে বসে মদপান করে। মদপানের একপর্যায়ে সাদ্দাম মাতাল হয়ে পড়লে সে শুকুরকে বলে, একটা মেয়ে মানুষ আন। মাস্তি করি। সাদ্দাম বলে এখন মেয়ে মানুষ আনবো কোথা থেকে। তখন সাদ্দাম বলে, চল আমার শ্বশুরবাড়ি চল। আমার বউ ওখানে নেই। ফলে শ্বশুরবাড়িতেই রুবিনাকে ডেকে নেবো। ওকে নিয়েই হবে মাস্তি। সাদ্দামের কথামতো সাদ্দামের সাথে শুকুর, মানিক যায়। এরপর রুবিনাকে ডেকে নিয়ে শুরু হয় ধর্ষণ।’ হকপাড়ার শুকুর আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, ‘প্রথমে রুবিনাকে ধর্ষণ করে সাদ্দাম। এরপর যখন আমি (শুকুর) শুরু করি, তখন হুমায়ুন বাঙাল সেখানে আসে। পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমাদের সরিয়ে দেয়। আমরা সরে যাই। হুমায়ুন বাঙাল ধর্ষণের পর যখন আমি (শুকুর) ফের সেখানে যাই, তখন দেখি মুখ দিয়ে ফুবড়া ফ্যানা বের হচ্ছে। রুবিনার শরীর অসাড় হয়ে গেছে।’
জানা গেছে, রুবিনা হত্যা মামলাটির তদন্তভার গড়িয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওপর। গোয়েন্দা পুলিশের চুয়াডাঙ্গা ইনচার্জ নাজমুল হুদা তদন্তভার নিয়েই তদন্তের গতি বাড়িয়েছেন। গত ২৬ জুন রাতে অর্থাৎ ঈদের দিন রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গোপনে অভিযান চালিয়ে শুকুরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই শুকুর স্বীকার করে সে ও সাদ্দামসহ কে কীভাবে রুবিনাকে হত্যা করে ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে। তাকে গতপরশু আদালতে সোপর্দ করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার দেয়া জবানবন্দি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেন বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান। অপরদিকে রুবিনা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হাজতি আরজিনা খাতুনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ আদালত। তিনি এজাহারভুক্ত মূল আসামি হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রী। ঘটনার পর থেকেই হুমায়ুন বাঙাল আত্মগোপনে। জামাই সাদ্দামও পলাতক। এ মামলার আইনগত সহায়তা নিয়ে রুবিনার অসহায় মায়ের পাশে রয়েছে চুয়াডাঙ্গার মানবতা ফাউন্ডেশন। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার বলেছেন, মামলার সন্দেহভাজন আসামি শুকুরকে ধরে গোয়েন্দা পুলিশের চুয়াডাঙ্গা ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজমুল হুদা আমাদের শুধু আশ্বস্তই করেননি, তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ের মধ্যদিয়ে ঘটনার প্রকৃত নেপথ্য উন্মোচন করে সত্যিই চরম বিচক্ষণতারই পরিচয় দিয়েছেন। অভিনন্দন।
প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রুবিনা খাতুন হাসপাতাল সড়কের রিজিয়া খাতুন প্রভাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। ওর পিতা ঢাকায় থাকে। গার্মেন্টেস চাকরি করেন। আর মা চায়না খাতুন বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে মা-মেয়ে কোনো করম খেয়ে না খেয়ে থাকতেন। গত ২ মে বিকেলে রুবিনার মৃতদেহ পাশের বাড়ির হুমায়ুন বাঙালের বাড়ি থেকে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে রুবিনাদের বাড়ির উঠোনের আমগাছে ঝুলিয়ে রেখে হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রী ও মেয়েসহ অন্যরা আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে থাকে। গৃহপরিচারিকার কাজ করার সময় খবর পান মেয়ে মারা গেছে। চায়না খাতুন বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রীর প্ররোচনায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। অবশেষে খবর পেয়ে রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত করা হয়। মহল্লার সাধারণ মানুষসহ রুবিনার সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে হত্যার নেপথ্য উন্মোচনের দাবি জানায়। একপর্যায়ে হুমায়ুন বাঙলালের মুখোশ খুলতে শুরু করে। রুবিনার মা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রীকে। তিনি অবশ্য তেমন কোনো তথ্য দেননি। মামলাটি বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রী আরজিনাকে রিমান্ডে নিয়ে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তার জামিরেন আবেদন গতপরশু যখন শুনানি হয় তখন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. শামশুজ্জোহার সাথে অ্যাড. মানি খন্দকার, অ্যাড. জীল্লুর রহমান জালাল জামিনে জোর আপত্তি জানান। বিজ্ঞ আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।