মতবিনিময়সভায় মেহেরপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক ও পৌর মেয়র

নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম মনি একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছেন

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম মনি পৌরসভার সচিব, বিদ্যুত বিভাগের মিস্ত্রি ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমতিয়াজ আহমেদ ইনতাজকে প্রহার করেছেন। একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও তার নামে থানায় মামলা রেকর্ড হচ্ছে না। তার খুঁটির জোর কোথায়? এমন সব প্রশ্ন ছুড়লেন উপস্থিত সুধীমহল। গত সোমবার তার অপকর্মের বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিলসহ জেলা প্রশাসেকর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পৌরসভার স্টাফ ও কাউন্সিলরবৃন্দ। তবুও তার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করেনি সদর থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম।

Meherpur Pourasova copy

গত রোববার রাত আটটার দিকে মেহেরপুর পৌরসভার রেস্টহাউজে তাসখেলাকে কেন্দ্র করে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম মনিরের নির্দেশে ১০/১২ জন যুবক শহরের শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্কের সামনে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমতিয়াজ আহমেদ ইনতাজকে পিটিয়ে জখম করে। কাউন্সিলর মনিরুলের স্বেচ্ছাচারিতা, একের পর এক কাউন্সিলর ও পৌরসভার স্টাফদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা এবং পৌরসভার উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে মতবিনিময়সভায় উপস্থিত সুধীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মেহেরপুর পৌর কর্তৃপক্ষ ওই মতবিনিময়সভার আয়োজন করেন।

পৌর মেয়র মো. মোতাছিম বিল্লাহ মতু বলেন, পৌর কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম মনি পৌরসভার মধ্যে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছেন। আমাকে (মতু) ঘায়েল করতে বিএনপি সমর্থিত মনিরুল ইসলাম মনিরের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন সরকার দলীয় এক জনপ্রতিনিধি। তিনি আরও বলেন, প্রায় তিন বছর গত হতে চললেও পৌরসভার উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। যার কারণ ওই জনপ্রতিনিধি। উন্নয়ন কাজের জন্য যেখানেই গিয়েছি সেখানেই তিনি ডিও লেটার দিয়ে সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। মডেল পৌরসভা হিসেবে মেহেরপুর পৌরসভা আজ অন্য দেশের কাছে পরিচিত। বিভিন্ন দেশের মানুষ এ পৌরসভা দেখতে এসেছেন। অথচ ওই জনপ্রতিনিধির বাধায় আজ সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে।

মেয়র আরও বলেন, ২০১১ সালের ১ এপ্রিল পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রিপন দুর্বৃত্তদের হাতে বোমা হামলার শিকার হয়ে ঢাকা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাত দিন পর মারা যান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রিপনের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ পয়জনে আক্রান্ত হয়েছিলো। বোমা হামলার শিকার হয়ে তার দোকানের এক কর্মচারী ও এক ব্যবসায়ী আহত হন। তাদের শরীরে কোনো পয়জন দেখা গেলো না কেন? মারা যাওয়ার পর ঢাকাতে ময়নাতদন্ত না করিয়ে ওই জনপ্রতিনিধি রিপনের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তিনজন এসআই ও দুজন সিআইডি তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছেন রিপন বোমা হামলায় মারা যাননি। অথচ তাকে (মতুকে) ঘায়েল করতে রিপন হত্যামামলায় আসামি করে এলাকা ছাড়া করা হয়। ফলে তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকতে পারায় পৌরসভার স্টাফসহ নাগরিকরা নানা সমস্যায় ভুগছেন। মতবিনিময়সভায় তিনি ঘোষণা দেন মনিরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আজ বুধবার থেকে তিন দিন সকাল ন’টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দু ঘণ্টা করে কলমবিরতি করবেন পৌরসভার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া মনির বিরুদ্ধে মামলা না হয়ে অন্য মামলা হলে তার নেতৃত্বে পৌরসভার ২০৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কাউন্সিলরবৃন্দ একযোগে আসামি হিসেবে থানায় হাজির হবেন।

জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী জানান, পৌরসভা যেহেতু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে; সেহেতু তিনি বিষয়টি দেখবেন। থানা যাতে মামলা গ্রহণ করে তার ব্যবস্থা করবেন। মতবিনিময়সভায় মেহেরপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মিয়াজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আশকার আলী, মাহাবুবুর রহমান মধু, আমদহ ইউপি চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম, বুড়িপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মুকুল, পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাছসুল আলম, আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য, প্রবীণ আইনজীবী রুস্তম আলী, জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. রমেশ চন্দ্রনাথ, তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ, পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ, স্থানীয় ইলেট্রনিক্স, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকসহ সুধীগণ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ সংবাদ মতে, মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, জিডি গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সদর থানার ওসি রিয়োজুল ইসলামের সাথে কথা বলতে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।