ভোট গ্রহনের ৪৮ ঘণ্টা আগে হাইকোর্টের চিঠি : ২ মাসের জন্য হাউলী ইউপি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা

 

ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীরা হতাশ : ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে এলাকাবাসী

বখতিয়ার হোসেন বকুল/আব্দুল লতিফ: দামুড়হুদার হাউলী ইউপি নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আরও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিনধার্য থাকলেও মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে রিটার্নিং অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার সাহা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ১৪ মার্চ লোকনাথপুর গ্রামের মৃত্যু আকরাম আলীর ছেলে আকবর আলী নির্বাচনী এলাকা বিভাজন সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। পিটিশন নং-৫১৪৪। এ সংক্রান্তে হাইকোর্ট ডিভিশন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হাউলী ইউপি নির্বাচনের কার্যক্রম ২ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করে পত্র প্রেরণ করেন। আমি বিষয়টির সত্যতা যাচাই শেষে উক্ত পত্রের আলোকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে পত্র প্রেরণ করেছি।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করাসহ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক হাউলী ইউপি নির্বাচন ২ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করে পত্র প্রেরণ করে। ফলে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে এলাকার ভোটারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেলেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে ভোট বন্ধের খবরে সকলেই মর্মাহত। আগামী ১৬ এপ্রিল হাউলী ইউপির ভোটগ্রহণের দিনধার্য থাকলেও মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে নির্বাচন বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ এলাকার সাধারণ ভোটাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অধিকাংশ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটারগণ বর্তমান চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আন্দোলনে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজি সহিদুল ইসলাম তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, এভাবে প্রত্যেকবার এতো খরচ-খরচার পাশাপাশি দিনরাত পরিশ্রমের পর ভোট বন্ধের খবরে আমি হতাশ। কি বলবো সে ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।

অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাইদ খোকন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু ইউনিয়ন বিভাজনের অজুহাতে তার নিজের লোক দিয়ে মামলা করিয়ে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে ভোটগ্রহণের মাত্র দু দিন আগে ভোট বন্ধ করালেন। একইভাবে ইতঃপূর্বেও একবার নির্বাচনের ঠিক একসপ্তা আগে উনি ভোট বন্ধ করিয়েছিলেন। এটা ভোটারদের সাথে এক ধরনের তামাশা মাত্র। তবে উনি ভোটারদের সাথে যে তামাশার খেলা খেলছেন তারও শেষ আছে। সুযোগ এলে জনগণ তার দাত ভাঙ জবাব দেবেই দেবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৩ এপ্রিল দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর, কার্পাসডাঙ্গা, কুড়ুলগাছি, পারকৃষ্ণপুর-মদনা, হাউলী ও দামুড়হুদা সদর এই ৬টি ইউনিয়নে একযোগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল মোতাবেক জুড়ানপুর, কার্পাসডাঙ্গা, কুড়ুলগাছি ও দামুড়হুদা সদর এই ৪টি ইউনিয়নে গত বছরের ২৮ মে ভোটগ্রহণ করা হলেও মামলাজনিত কারণে হাউলী ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা এ দুটি ইউনিয়নে ভোটের ঠিক এক সপ্তাহ আগে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এক বছর পর আগামী ১৬ এপ্রিল হাউলী ইউনিয়নের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচনের ঠিক দু দিন আগে আবারও ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হলো।