ভোট হচ্ছে ১৪৬ আসনে : প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৮৭ জন

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৬ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৮৭ জন প্রার্থী। ১৫৪ আসনে ক্ষমতাসীন মহাজোটের একক প্রার্থী থাকায় আগামী ৫ জানুয়ারি সেখানে আর নির্বাচন হচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন ৩৩৫ জন। তবে গত শুক্রবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের পরও অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার মঞ্জুর হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট সময়ের পরও ক্রমাগতভাবে একক প্রার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিতে অনেকটা বিব্রত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দু দিন পর গতকাল জাতীয় পার্টি (জাপা) আরো তিনজনকে একক প্রার্থী হিসাবে পেয়েছে কমিশন। এরা হলেন-নীলফামারী-৪ আসনের মো. শওকত চৌধুরী, রংপুর-১ আসনে মশিউর রহমান রাঙ্গা ও ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম। এর আগে গত শুক্রবার কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, একক প্রার্থী সংখ্যা ১১৬, আর শনিবার জানানো হয় এ সংখ্যা ১৫১ জন, গতকাল বলা হয়েছে, ১৫৪ জন। এরপরেও একক প্রার্থী বৃদ্ধির বিষয়ে স্পষ্ট কিছুই বলতে পারছেন না নির্বাচন কমিশনাররা।

কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু শুক্রবার ১০টা পর্যন্ত কমপক্ষে ১২টি জেলার রিটার্নিং অফিসাররা প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠায়নি। যে কারণে এ তালিকায় একক প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। অভিযোগ এসেছে গত শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও রোববার সকাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অনেকের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক ব্যক্তির লিখিত প্রার্থী প্রত্যাহার সংক্রান্ত নির্দেশনার কারণে একক প্রার্থী নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। রিটার্নিং অফিসাররা সেই নির্দেশনা পেয়ে (প্রত্যাহারের সময়ের মধ্যে তারিখ দেখিয়ে) বিলম্বে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। এ কারণে একক প্রার্থীর সংখ্যা কয়েকদফা বেড়েছে।

এদিকে, গতকাল দিনভর একক প্রার্থী সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি নিয়ে একাধিক বৈঠকে বসে কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যর নির্বাচন কমিশন। কমিশনাররা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যেসব জেলার রিটার্নিং অফিসাররা বিলম্ব করে প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন তাদের সাথে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনাররা। কি কারণে তারা বিলম্ব করেছেন তার জবাব চান তারা। রাত ৮টা পর্যন্ত তারা দফায় দফায় এ নিয়ে বৈঠক করেন। কতজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে যাচ্ছেন, কতজন প্রত্যাহার করেছেন, কোন দলের কতজন প্রার্থী আছেন-এখনো সেই হিসাবে মেলাতে পারেনি কমিশন। তারা বলছেন, রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্বহীনতার কারণে একক প্রার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত ১০টার মধ্যে লালমনিরহাট, পটুয়াখালী, বরিশাল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ব্রহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নীলফামারী জেলার রিটার্নিং অফিসাররা চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা পাঠাতে পারেননি। ১৫৪ আসনে একক প্রার্থী থাকায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, কক্সবাজার, রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, নাটোর, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালীর অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না। রাজবাড়ী, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার কোনো আসনে ভোটই হবে না। কারণ এসব আসনের প্রতিদ্বন্দ্বীকারী সকলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১১০৭ জন। যাচাই-বাছাইয়ে মনোনীত হন ৮৪৭ জন আর মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ২৬০ জনের। আপিল শুনানি শেষে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭৬। আর প্রত্যাহার করেছেন ৩৩৫ জন। এখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৫৪১ জন। এর মধ্যে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কার্যত নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা থাকছে ৩৮৭ জন। যা বাংলাদেশের যেকোনো সাধারণ নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১২৭, জাতীয় পার্টি (জাপা) ২১, ওয়ার্কার্স পার্টির ২, জাসদের (ইনু) ৩ এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগে সর্বোচ্চ ৪৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ২৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নবম সংসদের ওই নির্বাচিতরা আর শপথ গ্রহণের সুযোগ পাননি। বহুল আলোচিত ১/১১-এর মাধ্যমে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই নির্বাচন বাতিল করা হয়। এর আগে ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সময় ১১ জন, ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে ১১ জন, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের সময়ে ১৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে একজন প্রার্থীও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হননি।