ভারতে চামড়া পাচার প্রতিরোধে জীবননগর সীমান্তে বিজিবির কড়া পাহারা

স্টাফ রিপোর্টার: কোরবানির পশুর চামড়া পাচাররোধে চুয়াডাঙ্গার ৮৮ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবি সতর্কাবস্থায় রয়েছে। ঈদের দিন থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। চামড়াবাহী কোনো গাড়ি যাতে সীমান্ত এলাকায় যেতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বিজিবিকে সতর্কাবস্থায় দেখা গেছে। বিজিবির দর্শনা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার খোরশেদ আলম জানান, সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যাতে চামড়া পাচার হতে না পারে সেজন্য বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামান জানান, চামড়া পাচাররোধে বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার ও বিওপি কমান্ডারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ভারতে চামড়া পাচার প্রতিরোধে জীবননগর সীমান্তে বিজিবি কড়া সতর্কাবস্থা জারি করেছে। গত ৫ অক্টোবর থেকে এ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চলবে এ সতর্কাবস্থা।

অপরদিকে কেউ যাতে ভারতে পাচারের উদ্দেশে সীমান্ত এলাকায় চামড়া মজুদ করতে না পারে সে জন্যে সীমান্তের শূন্য রেখা হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যাপক টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিজিবি। চামড়া শিল্পের দুটি সংগঠন বিটিএ ও বিএফএলএলইএ যৌথভাবে সীমান্তের ১১টি পয়েন্টকে ভারতে চামড়া পাচারের ঝুঁকিপূর্ণ রুট হিসেবে চি‎হ্নিত করে একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ, মাগুরা, শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার চামড়া জীবননগর সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে পাচার হতে পারে। এরই প্রেক্ষিতে বিজিবি জীবননগর উপজেলার পুরো সীমান্ত এলাকাজুড়ে কড়া সতর্কাবস্থা জারি করেছে।

জীবননগর উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি সিন্ডিকেটচক্র ইতোমধ্যে ভারতে চামড়া পাচারের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা কম মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাচারের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। আর এসব চামড়া ক্রয়ের জন্য তাদের হাতে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার পুঁজি। আবার পশুর ওই সব চামড়া সংগ্রহের জন্য এ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে এ দেশীয় এক শ্রেণির দালালচক্র। তারা কমিশনের ভিত্তিতে গরু, মোষ ও ছাগলসহ বিভিন্ন পশুর চামড়া তুলে দেবে সীমান্তের কিছু চামড়া সিন্ডিকেটচক্রের কাছে। পরে এ সিন্ডিকেট উপজেলার বেনীপুর, গয়েশপুর. নতুনপাড়া, ধোপাখালী ও রাজাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে চামড়া ভারতে পাচার করবে। তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিমত, এ বছর কোরবানির ঈদে পর্যাপ্ত পশু আমদানি হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি হয়নি। চামড়া ক্রেতারা জানান, এক শ্রেণির অসৎ দেশীয় ক্রেতাদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, সিন্ডিকেট করে চামড়ার মূল্য কম নির্ধারণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে চামড়া ক্রয় করে পাওনা টাকা মাসের পর আটকে রাখা প্রভৃতি কারণে চামড়ার একটি বড় বাজার ভারতে পাচার হয়ে যায়। বাংলাদেশের বাজার দরের চেয়ে ভারতে গরু, ছাগল, মোষ ও ভেড়ার চামড়ার চাহিদা ও বাজার দর দুটোই অত্যাধিক। পাশাপাশি ভারতের ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয়ের কোনো অর্থই বকেয়া রাখে না। মূলত ভারতের চামড়া পাচারের এটিই প্রধান ও অন্যতম কারণ বলে এখানের ব্যবসায়ীরা মনে করেন। তবে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুজ্জামান বলেন, ভারতে চামড়া পাচাররোধে বিজিবি-বিওপিগুলো কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে এবং টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।