ভারতীয় গরু আমদানিতে মেহেরপুরের গরু পালনকারীরা উদ্বিগ্ন

ঢাকার কোরবানির হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত আট হাজার বড় গরু

 

মাজেদুল হক মানিক: কোরবানির পশু হাটকে সামনে রেখে মেহেরপুরের গরু পালনকারী পরিবারগুলোতে ব্যস্ততার শেষ নেই। গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে এবারও গরু তুলবেন ঢাকার বিভিন্ন পশুহাটে। হাটে গরু নেয়ার পথে চাঁদাবাজি ও পশুহাটে অজ্ঞানপার্টির খপ্পর তো আছেই তার ওপরে ভারতীয় গরু আমদানিতে গরু পালনকারী এখন উদ্বিগ্ন।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর গ্রামের মোকলেছুর রহমানের খামারে ১৫টি গরু রয়েছে। গত বছর ঢাকার কোরবানির বাজারে তিনি ১০টি গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আশা ছিলো ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। প্রথম দিকে দাম ওঠে ১০ লাখ। শেষের দিকে বড় আকারের গরুর ক্রেতা খুঁজে পাননি মোকলেছুর হরমান। কম দামে বিক্রি হলে গরু মোটাতাজা করার খরচই মেটবে না বিধায় সবগুলো গরু বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। তখন থেকেই ওই গরুগুলো এ বছরের কোরবানির হাটে বিক্রি জন্য লালনপালন করছেন। এতে তার খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এবার আরও বেশি দামে বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন খামারি মোকলেছুর রহমান। কিন্তু দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আমদানির কারণে গত বছরের মতো লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তার মতোই জেলার হাজারো গরু পালনকারী এখন এরকমই আশঙ্কায় শঙ্কিত। তাই কোরবানির হাটের এ সময়টাতে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানালেন এ অঞ্চলের গরু পালনকারীরা।

আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গরু পালনকালী মিজানুর রহমান জানালেন, জেলার প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটি খামার। বেশির ভাগ মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। সবার লক্ষ্য থাকে বছরের কয়েক দিনের এ কোরবানির হাট। এখানে এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে ছয়/সাত লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ায় মতো গরুর সংখ্যাও কম নয়। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, এ জেলা থেকে আট হাজার বড় আকারের গরু ঢাকার হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত।

গাংনীর গরুব্যবসায়ী আবেদ আলী জানিয়েছেন, এ জেলার সীমান্ত দিয়ে গরু করিডোর না হলেও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে গরু আনা হচ্ছে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর হাট চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও গাংনী উপজেলার বামন্দী। চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে এসব হাটে ভারতীয় গরু বেচাকেনা হচ্ছে। এতে দেশি গরুর দাম পড়ে গেছে।

গরু পালনকারীরা আরো জানিয়েছেন, গত দু বছরে গরু পালনের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। ঢাকার হাটে ট্রাকে গরু নেয়ার সময় পথে পথে চাঁদাবাজিতে আছেই। আর ভারতীয় গরু আমদানি হওয়ায় এলাকার গরুর দাম এখনই পড়তে শুরু করেছে। এতে গরু পালনকারীরা পথে বসার আশঙ্কা করছেন।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উৎসাহে অনেকেই গরু মোটা তাজা করার কাজ করছেন। কিন্তু এভাবে লোকসান হলে গরু পালনে আগ্রহ কমে যাবে। তাই কোরবানির মরসুমে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক হওয়ায় আহ্বান জানালেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শশাঙ্ক কুমার মণ্ডল।