ভাতের জন্য ফুফুর বাড়ি যাওয়ার পথে মাইক্রোর ধাক্কায় ঝরলো শিশুর প্রাণ

 

 

চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের হায়দারপুর তালবাগান মোড়ে দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

উজ্জ্বল মাসুদ/মাহমুদ কামরান: মায়ের কাছে ভাত চেয়ে না পেয়ে ফুফুর বাড়ি যাওয়ার পথে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে শিশু রুবেল (৭)। গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের হায়দারপুর তালবাগান বাঁকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর পুলিশি আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় জনগণ দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, হায়দারপুর মাঝেরপাড়ার স্বপন আলীর শিশুসন্তান রুবেল সোয়া ২টার দিকে সড়ক পার হচ্ছিলো। ঝিনাইদহমুখি মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দেয়। আছড়ে পড়ে। চাকায় পিষ্ট করে মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থল অতিক্রম করলে স্থানীয় কয়েকজন শিশু রুবেলকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরদিকে স্থানীয় ফার্মেসি ব্যবসায়ী জামিরুল ইসলাম তার অ্যাপাসি মোটরসাইকেলযোগে মাইক্রোবাসের পিছু নেন। ডিঙ্গেদহের হাইওয়ে ফিলিং স্টেশনের নিকট মাইক্রোটি থামানো হয়। এদিকে দুর্ঘটনাস্থলে উত্তেজিত জনতা সড়কের ওপর অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান মুন্সী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল অতিক্রম করে ডিঙ্গেদহের হাইওয়ে ফিলিং স্টেশন পৌঁছান। তিনি বলেছেন, মাইক্রোবাসটি চুয়াডাঙ্গা জজশিপে। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি পরিদর্শনের উদ্দেশে রওনা হলে হায়দারপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্রোটকল অনুযায়ী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিরাপত্তা দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার পথে হায়দারপুর মোড়ে উত্তেজিত জনতা সরকারি কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। অবশ্য তাতে সমস্যা হয়নি। সেখান থেকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিরাপদে নেয়া হয়। পরে দুর্ঘটনাস্থলে উত্তেজিত জনতা অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।

দুর্ঘটনাস্থলে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস, ইউএনও কেএম মামুন উজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান সঙ্গীয় অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে পৌঁছে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। ততোক্ষণে সড়কের দু প্রান্তে অসংখ্য যানবাহন জড়ো হয়ে যায়। দূরপাল্লার কোচযাত্রীদেরও পোহাতে হয় দুর্ভোগ। স্থানীয়রা দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোচালক ও সদর থানার ওসির অসৌজন্যমূলক আচরণের বিচার দাবি করে বলে, ওসি দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি যখন চুয়াডাঙ্গার দিকে নিচ্ছিলেন তখন সড়কে অবস্থানরত জনগণের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার মতো করে চালিয়েছেন। এ কারণে ক্ষোভের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। পরে অবশ্য উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আপস করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেলেও এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস অবশ্য বলেছেন, শিশুর মৃতদেহ সন্ধ্যায় তার নিজ গ্রামে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য কিছু টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মামলা করবে না মর্মে জানানোর কারণেই শিশুর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেনি পুলিশ।

স্থানীয়রা বলেছে, শিশু রুবেলের পিতা স্বপন হতদরিদ্র। দিনমজুর। দু ভাই দু বোনের মধ্যে শিশু রুবেল ছিলো ছোট। সে ব্র্যাক স্কুলের শিশু শ্রেণিতে পড়তো। পরিবারের দস্যরা বলেছে, হতদরিদ্র পরিবারে গতপরশু রাতে তিন পোয়া চাল রান্না করা হয়। বড়রা রাতে সেই ভাত খেয়ে রোজা রাখেন। আর অবশিষ্ট অংশ শিশু রুবেল সকালে খায়। সে দুপুরে আবারও ভাত চায় তার মায়ের কাছে। মা ভাত নেই বলে জানালে, শিশু রুবেল একই গ্রামের রাস্তার অপরপ্রান্তের মাঠপাড়াস্থ ফুফা শাহাদতের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। ফুফুর কাছে গেলেই সে খেতে পারবে আশায় ছুটছিলো সেদিকে। রাস্তা পার হতে গেলে দুর্ঘটনায় ঝরে গেলো তার প্রাণ। এ বর্ণনা শুনে স্থানীয়দের অনেকেই চোখের নোনা পানি ধরে রাখতে পারেনি। সন্ধ্যায় বেদনাবিধূর পরিবেশে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়।