ভাই-ভাতিজাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে বৃদ্ধ কাশেম নিহত : সংঘর্ষে উভয়পক্ষের আহত ৮

 চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার মদনায় জমিজম বিরোধের জের ধরে ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তক্ষয় সংঘর্ষ : হাসপাতাল গ্রেফতার ৩

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে হারুন রাজু/হানিফ মন্ডল: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার মদনা পাঠানপাড়ায় ভাই ভাতিজাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হয়েছেন আবুল কাশেম (৫৫)। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে নিজেদের বাড়ির আঙিনায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আবুল কাশেম নিহত হন। আহত হয়েছে উভয়পক্ষের ৮ জন। খুনের অভিযোগে রহমত উল্লাহ, জায়নাল ও আলিমসহ রহমতের স্ত্রীকে পুলিশ আটক করেছে। গতকালই এদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করে। পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, মদনা পাঠানপাড়ার মৃত শামছুদ্দিনের দু ছেলে রহমতুল্লাহ ও আবুল কাশেম। পিতার রেখে যাওয়া ভিটের প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু ভাই ও তাদের ছেলেদের মধ্যে বিরোধ দানা বাধে। এক পর্যায়ে তারা জমি ভাগাভাগিও করে। বাড়ির রাস্তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। তা নিয়েও বিরোধের মাত্রা তীব্ররত হয়ে ওঠে। বাড়ি সংলগ্ন জমিতেই বাঁশের ঝাড় গড়ে তোলেন আবুল কাশেম। বাঁশঝাড়টি বিরোধপূর্ণ জমিতে বলে উভয়পক্ষ দাবি তোলে। গতপরশু রহমতুল্লার ছেলে জয়নাল ঝাড় থেকে একটি বাঁশ কাটে। এ নিয়ে গতকাল সকাল হতে না হতে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আবুল কাশেমের হাতে ও ঘাড়ে কোপ মারা হয়। তিনি মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়েন। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে নিহত আবুল কাশেমের ছেলে আইনাল (৩২), আকবর আলী, ইদ্রীস আলী, ফরজ আলী, মেয়ে পারুল ও কাশেমের স্ত্রী তহমিনা খাতুন ওরফে মিনাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদের মধ্যে আইনালকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। অপরপক্ষে আহত হয়, রহমতুল্লাহ, তার স্ত্রী আমেনা খাতুন, ছেলে জয়নাল ও আলিমকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

নিহত আবুল কাশেমের ছেলে ও মেয়েরা অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ তুলে বলেছেন, আবুল কাশেমের ঘাড়ে কোপটি মারে জয়নাল। অন্যরাও আঘাত করেছে। আইনালের মাথায় কোপ লেগেছে। ফরজের লেগেছে হাতে। পারুলের পায়ে কোপ লাগে। অপরপক্ষও ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হয়েছে।

গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে আবুল কাশেমের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে লাশ তার নিকটজনেরা গ্রহণ করেন। গতরাতেই গ্রামে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়। নিহত আবুল কাশেমের ছেলে আকবর বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় খুনমামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার আগেই পুলিশ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪ জনকে আটক করে। মামলা রুজুর পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। চিকিৎসার পরই এদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে ভাই ভাতিজার ধারালো অস্ত্রের কোপে আবুল কাশেম নিহত হওয়ার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি গতকাল হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি নিহতের নিকটজনদের সান্ত্বনা দেন। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

অপরদিকে দু ভাই দুটি দলের সাথে সম্পৃক্ত বলে তাদেরই এক চাচাতো ভাই শমশের আলী জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিহত আবুল কাশেম আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। অপর ভাই খুন মামলার আসামি রহমতুল্লাহ জামায়াতের সমর্থক। এ নিয়েও এদের মধ্যে বিরোধ ছিলো।