ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি : ১৫ ছাত্রকে ঢাবি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার

শিক্ষকের কক্ষ থেকে শিক্ষিকা উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার: ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৫ ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের কক্ষ থেকে এক শিক্ষিকাকে উদ্ধারের ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ওই ১৫ ছাত্রকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বহিষ্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া ১৫ জনের মধ্যে ১২ জন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্য তিনজন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২০১১-১২ সেশনের দুজন, ২০১৩-১৪ সেশনের ১ জন এবং ২০১৬-১৭ সেশনের একজন রয়েছে। জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃতরা তিনজন হলেন- ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাভিদ আনজুম তনয় (২০১১-১২), পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন রানা (২০১১-১২), ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন (২০১৩-১৪)। এই তিন জন জালিয়াত চক্রের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করতো। রানা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলো। ঘটনার পর তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া ২০১৬-১৭ সেশনের বহিষ্কৃতরা হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নাহিদ ইফতেখার, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. আজিজুল হাকিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের বায়েজীদ, সংস্কৃত বিভাগের প্রসেনজিৎ দাস, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ফারদিন আহমেদ সাব্বির, অর্থনীতি বিভাগের রিফাত হোসাইন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাফসান করিম, বাংলা বিভাগের আখিনুর রহমান অনিক, ইতিহাস বিভাগের টিএম তানভীর হাসনাইন, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মুন্সী সুজাউর রহমান এবং পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের নাজমুল হাসান নাঈম।

এদিকে মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের কক্ষ থেকে শিক্ষিকা উদ্ধারের ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ এস মাকসুদ কামাল ও নীলিমা আক্তার।

তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের প্রতিবেদন, শিক্ষকদ্বয়ের স্ব স্ব বিভাগের সিএন্ডডি’র সিদ্ধান্ত এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন- সিন্ডিকেট সদস্য ও আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইমদাদুল হক, সিন্ডিকেট সদস্য নীলিমা আক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য বাহালুল মজনুন চুন্নু। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে সিন্ডিকেট সূত্র জানায়।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর শনিবার এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের প্রভাষক উম্মে কাওসার লতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আকিব উল হকের কক্ষ হতে তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় আকিব উল হকের স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী তাহমিনা সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান বরারব একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আকিব উল হককে অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং উম্মে কাউসার লতাকে এক বছরের জন্য নিজ নিজ বিভাগের সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।