বড় শহরে ১৪৪ ধারা : ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৮ দলের সমাবেশ আজ

রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : বিজিবির টহল

স্টাফ রিপোর্টার: উদ্বেগ উৎকণ্ঠার ২৫ অক্টোবর আজ। টান টান উত্তেজনা আর নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে শর্তসাপেক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি মোড়ে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। জনমনে নানা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের এ সমাবেশ। রাজধানী ছাড়াও সাতটি বিভাগীয় শহর ও প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একযোগে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পায়নি আওয়ামী লীগ। তারা অবশ্য আজ সমাবেশ না করলেও রাজপথে থাকার কথা বলেছে।

অপরদিকে রাজধানীর বনানী থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সময় শাহজাহানপুরে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়াও বাড্ডার শাহজাদপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে এসব ঘটনা ঘটে। আগুন লাগানোর ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, স্থানীয় বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা এসব ঘটনার সাথে জড়িত।

এদিকে কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, খাগড়াছড়ি ও সোনারগাঁসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মেহেরপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বেলা ২টায় শুরু হওয়া সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়ার পর পরই নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতির জন্য একটি প্রতিনিধি দলকে ডিএমপিতে পাঠান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে রাজি হয় বিএনপি। এদিকে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, গাইবান্ধা, মেহেরপুরসহ অনেক জেলায় নামানো হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে চলছে গ্রেফতার অভিযান। তবে মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। ঢাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ৱ্যাব ও পুলিশ। চেকপোস্ট বসিয়ে সাধারণ পথচারীর পাশাপাশি প্রতিটি যানবাহনে চালানো হয় তল্লাশি। নিরাপত্তার নামে সাধারণ মানুষও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি বিরোধীদলকে মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও আজ রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়া হলে সবকিছুর দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার ও বিরোধীদলের এমন পাল্টাপাল্টি কঠোর অবস্থানের কারণে সমাবেশ ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর মধ্যে এ উদ্বেগের মাত্রাটা একটু বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজপথে যানবাহনের সংখ্যা ছিলো খুবই কম। রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের চলাফেরাও ছিলোসীমিত। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হননি। এদিকে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, খুলনা, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ সারাদেশে সরকার ও বিরোধীদল মুখোমুখি অবস্থান করায় ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্ক করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সমাবেশ থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ মুহূর্তে কিছুটা নমনীয় হতে পারে বিএনপির হাইকমান্ড। নির্দলীয় সরকার নিয়ে জোটের প্রস্তাব এবং সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চিঠি দেয়ার পর সরকার কি উদ্যোগ নেয় সেজন্য কিছুটা সময় দেয়ার পক্ষে তারা। সমাবেশ থেকে অতিদ্রুত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি শেষবারের মতো আহ্বান জানাতে পারেন খালেদা জিয়া। কয়েক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক উদ্যোগ না নিলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেয়া হতে পারে। তবে সমাবেশে আসতে ক্ষমতাসীনরা বাধা দিলে বা দেশের কোথাও বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ঘটলে আগামী রোববার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের ব্যাপারেও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
নাটকীয়তা: সমাবেশ অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। ২৫ অক্টোবর বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও পল্টন ময়দানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেয়। কিন্তু অনুমতির ব্যাপারে কোনো সাড়া না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক ও শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যান। এসময় মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ছিলেন না। সেখান থেকে বেরিয়ে বরকতউল্লা বুলু বলেন, তারা আজ বেলা ২টায় নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দুই ঘণ্টা পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। অবশেষে সন্ধ্যায় ১৩টি শর্তে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে বলে বিএনপি প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। এসব বিবেচনা করে সোহরাওয়ার্দীতে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস বিএনপি তাদের প্রতিশ্র“তি রক্ষা করবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। তবে সমাবেশ করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেউ ফৌজদারি কার্যবিধি আইন লংঘন করে বিশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হলে তাকে আইনের মুখোমুখি করা হবে।
সোহরাওয়ার্দী নয়, নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতির জন্য মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করতে রাতেই একটি প্রতিনিধি দলকে ডিএমপি কার্যালয়ে পাঠান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বরকত উল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এ রিপোর্ট (রাত ৯টা) পর্যন্ত কোথায় সমাবেশ করবেন সেটা চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করবে বলে দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করে।

যে ১৩ শর্তে অনুমতি: ১. শুধুমাত্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশ অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম ও মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, ২. সমাবেশ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করতে হবে, ৩. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কে বা সড়কের পার্শ্বে মাইক/প্রজেকশন ব্যবহার করা যাবে না, ৪. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না, ৫. পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে মঞ্চ তৈরি করতে হবে এবং সমাবেশ অনুষ্ঠান ব্যতীত মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না, ৬. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভ্যন্তরস্থ কোনো স্থাপনা কিংবা বৃক্ষরাজির কোনো ক্ষতি সাধন করা যাবে না, ৭. সমাবেশ অনুষ্ঠান শুরুর ০২ (দু) ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে এবং বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে, ৮. অনুমোদিত সময়ের পূর্বে কিংবা পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়াসহ যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরবর্তীতে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে অনুমতি প্রদান করা হবে না, ৯. সমাবেশ অনুষ্ঠান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জনস্বার্থ, রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তাবিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না, ১০. কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড, দা, কুড়াল, কাস্তে, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না, ১১. মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না, ১২. উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলিয়া গণ্য হবে, ১৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে ওই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

বিএনপির চূড়ান্ত প্রস্তুতি: বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা ক্ষমতাসীন দল থেকে কোনো বাধা এলে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। যেকোনো মূল্যে আজ শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনের জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিঙে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সমাবেশ-জনসভা করা রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার জনসভা করবই। জনসভা হবেই।

ঢাকাসহ সারাদেশে ৮ শতাধিক নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ হানা দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, জনসভাকে সামনে রেখে সারাদেশে নেতাদের বাসায় বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ তাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার ও ভাঙচুর করার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, এসব বন্ধ না করলে এর পরিণতি শুভ হবে না।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে আজকের সমাবেশের সব রকমের প্রস্তুতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই মনিটর করছেন। সমাবেশ সফল করতে স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেন। অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথে দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের লক্ষ্যে রাজধানীর পাশের গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা নেতাদের সাথে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। গ্রেফতার ও বাধা মোকাবেলার কৌশল হিসেবে বড় ধরনের মিছিল না নিয়ে ছোট ছোট গ্র“পে ভাগ হয়ে সমাবেশে আসতে ওইসব জেলা নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়।

কর্মসূচি সফল করা ও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে সিরিজ বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দায়িত্বশীল নেতারা। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলো নিজেরা আলোচনা করে করণীয় চূড়ান্ত করে। তবে গ্রেফতার এড়াতে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে নেয়া হয় এই প্রস্তুতি।

এদিকে সমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক। এতে সমাবেশ সফল করতে নানা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। জোটের নেতাকর্মীদের সমাবেশে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
জামায়াতসহ জোটের শরিক দলগুলোর ব্যাপক প্রস্তুতি: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আজকের সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জোট সমর্থিত ইসলামী দলগুলো। দলগুলো আজকের সমাবেশে নিজেদের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে এগিয়ে থাকবে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ দলীয় জোটের আজকের সমাবেশ ও কর্মসূচি সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। এছাড়া এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ (বিএমএল)সহ জোটের শরিক দল আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছে।

দলীয় সরকারের অধীনে শিক্ষকরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন না: আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে দলীয় সরকারের অধীনে করা হলে তাতে পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন না শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মহাসমাবেশে এ ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। চাকরি জাতীয়করণ, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ, খসড়া শিক্ষা আইন বাতিল, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে ওই মহাসমাবেশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, বিগত পাঁচ বছরে সরকার শিক্ষকদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। এ সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি। বরং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষকরা রাজপথে তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে নামলেও তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেছে। সুতরাং যে সরকার শিক্ষকদের লাঠিপেটা করে, শিক্ষকদের চোখে পিপার স্প্রে ছুড়েছে, যে সরকার শিক্ষকদের রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে এবং শিক্ষকদের রিমান্ড দেয়। সেই সরকার অগণতান্ত্রিক সরকার, স্বৈরাচার সরকার।

তিনি বলেন, এদেশের শিক্ষক সমাজকে যা দিয়েছে, সব দিয়েছে বিএনপি সরকার। এ সময় তিনি বিএনপি সরকারের বিভিন্ন অবদানের চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, গত ৫ বছরে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ভাতা দেয়ার নামে কোনো সুবিধা তাদের দেয়া হয়নি। সব টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। খসড়া শিক্ষা আইন থেকে ইসলাম শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। এমন নাস্তিক শিক্ষামন্ত্রী আমরা চাই না।

ঐক্যজোটের এ নেতা খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক শিক্ষক চাকরিচ্যুত হয়েছে। আপনি ক্ষমতায় এলে তাদের বকেয়া দেবেন এবং আমাদের সব ধরনের দাবি বাস্তবায়ন করবেন এমনটি আশা আমাদের। আমরা আপনার পাশে আছি, সব সময় থাকবো।

চট্টগ্রামে সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি-আ.লীগ: শর্ত সাপেক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। দু দলকে লালদীঘি ময়দানের পরিবর্তে বিএনপিকে কাজির দেউড়ি মোড়ে এবং আওয়ামী লীগকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। এর আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বিএনপি নগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সাথে পৃথকভাবে আলোচনায় বসেন। এতে লালদীঘি ময়দান বাদ দিয়ে দুদলই বিকল্প স্থান পছন্দ করায় সিএমপির সভা সমাবেশের ওপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে নেয়।

সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার জানান, বিএনপি কাজির দেউড়ির মোড়ে এবং আওয়ামী লীগ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করতে রাজি হয়েছে। তাদের প্রচলিত শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে মঞ্চ তৈরির সরঞ্জামাদী জব্দ: পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে মঞ্চ তৈরির সরঞ্জামা আনা হলে তা জব্দ করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চার রিকশা ভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয়। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক এগুলো রিকশা থেকে নামাতে থাকে। কিন্তু দু-এক মিনিটের মধ্যে পুলিশ তা জব্দ করে নিয়ে যায়। পল্টন থানা পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

পল্টন থানার ওসি গোলাম সারোয়ার জানান, ডিএমপির পক্ষে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি নেই তাই সরঞ্জামাদি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। চার রিকশাচালককে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানান ওসি। পল্টন এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাতে বিএনপির মঞ্চ তৈরির প্রস্তুতির পর সেখানে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। কোনো গাড়ি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।