বেয়াইয়ের গেঁথে দেয়া চাকু নিয়ে হাসপাতালে বেয়াইন

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর আন্দুলবড়িয়া হাসপাতালপাড়ায় বেয়াই জামাল উদ্দীনের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন বেয়াইন ছলেহা খাতুন (৪৭)। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে তার পিঠের ওপরে ছুরি গেঁথে দেয়া হয়। চাকুটি এতোটাই গভীরে গেঁথে যায় যে, তা আর টেনে বের করতে না পেরে দ্রুত সটকে পড়ে বেয়াই। এ সময় ছালেহা খাতুনের মেয়ে জেসমিনকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত জামাল উদ্দীন ছালেহা খাতুনের মেয়ে জেসমিনের শ্বশুর।

জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী স্কুলশিক্ষক শাহীনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এবার শাহীনের পিতার ধারালো অস্ত্র ছুরিকাঘাতে জখম হলো জেসমিনের মা। এ তথ্য দিয়ে ছলেহা খাতুনের শয্যাপাশে থাকা জেসমিন বলেছে, এর আগে আগুন দিয়ে আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলো ওরা। প্রাণে রক্ষা পেয়ে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আর নির্যাতন করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে স্বামী শাহীন ঘরে নিলেও কথায় কথায় নির্যাতন করে আসছে। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করে আসছিলাম। এবার মাকে চাকু দিয়ে রক্তাক্ত জখম করলো স্বামীর পিতা। আমি ওদের বিচার চাই।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জীবননগর আন্দুলবাড়িয়া হাসপাতালপাড়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মিজানুর রহমানের মেয়ে জেসমিনের সাথে ২০০০ সালে প্রেম সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ে করে একই গ্রামের জামাল উদ্দীনের ছেলে শাহীন। বিয়ের পর শাহীন নানা অজুহাতে জেসমিনকে নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনে স্বামীর সাথে যোগ দিতো ঘরে থাকা আইবুড়ো দু ননদ। জেসমিনের কোলজুড়ে আসে সন্তান। নাম রাখা হয় অপির্তা। ওর বয়স এখন ৮ বছর। শাহীন খয়েরহুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২০০৮ সালের ১৯ জুন জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে পুড়িয়ে মারতে যায় শাহীন। এরপর জেসমিন স্বামীর ঘর করবে না জানিয়ে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আর নির্যাতন করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে শাহীন তার স্ত্রী জেসমিনকে ফিরিয়ে নেয়। জীবননগরের আশতলাপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করে। গত ১৬ ডিসেম্বর জেসমিন তার মেয়েকে সাথে নিয়ে পিতার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে জেসমিনের মেয়ে অর্পিতা যায় তার দাদাবাড়ি। ফুফুরা দই খাচ্ছে দেখে সে দই চায়। ফুফুরা তা না দিয়ে কটুক্তি করে ফিরিয়ে দেয় বলে সে নানাবাড়ি মায়ের কাছে ফিরে নালিশ করে। এ নিয়ে বাধে ঝগড়া। এরই এক পর্যায়ে জেসমিনের স্বামী শাহীনের পিতা ধারালো অস্ত্র চাকু নিয়ে ছুটে এসে জেসমিনের মায়ের পিঠে আঘাত করে। চাকুটি পিঠে গেঁথে থাকে। পরে ছুরিকাঘাতে জখম ছালেহা খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছালেহা খাতুনের শয্যাপাশে ছিলেন জেসমিন। তিনি উপরোক্ত বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, আমাকে মেরে আহত করেছে। আর আমার মাকে ছুরি দিয়ে খুন করতে চেয়েছিলো। আমি বিচার চাই। আমার স্কুলশিক্ষক স্বামীর নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই।