বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ : মৃত্যুঝুঁকিতে শিশুরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুহার কমলেও দেশে নিউমোনিয়া নিয়ে এখনও আতঙ্ক কমেনি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিউমোনিয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটে। দশ বছর আগে দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ৫০ হাজার শিশুর মৃত্যু হতো। বিশ্বজুড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে একজন করে নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারায়। শিশুমৃত্যুর এই হার এইডস ও ম্যালেরিয়ায় সম্মিলিত প্রাণহানির চেয়েও বেশি। গত কয়েক বছর ধরে ‘হিব-ভ্যাকসিন’ প্রয়োগের মাধ্যমে নিউমোনিয়া সংক্রমণ অনেকাংশে কমেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে অতি কার্যকর প্রতিষেধক নিউমোকক্কাস ভ্যাকসিন (পিসিভি) প্রদান করা হবে। ছয় মাস বয়সের নিচে সব শিশু বিনামূল্যে এ ভ্যাকসিন পাবে। এ ভ্যাকসিন প্রয়োগে নিউমোনিয়া সংক্রমণে মৃত্যুর হার অর্ধেক কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজিবিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সমীর কুমার সাহা সমকালকে বলেন, নিউমোকক্কাস ভ্যাকসিন জীবাণুঘটিত নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য মারাত্মক রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখবে। এ ভ্যাকসিন প্রয়োগে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেক কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুসের মূল অংশে পানি জমে যায়। ফলে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং কার্যক্ষমতা কমে যায়। নিউমোনিয়ার প্রভাবে সর্দি, জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। নিউমোনিয়ার কারণ নিউমোকক্কাস নামের এ ব্যাকটেরিয়া শিশুর ফুসফুসের জন্য বিপজ্জনক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ৯৩ লাখ ৫০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। দিনে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ শিশুর মৃত্যু হয়। নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে ৫৪ শতাংশ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হলেও বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় লাখ মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে পাঁচ বছর বয়সের নিচে প্রায় ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটে। ভারতে এ সংখ্যা চার লাখের কিছু বেশি। এ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবার দিবসটি প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, শিশুদের সুরক্ষা’।ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৩ হাজার ৯৫৫ শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল ৩ হাজার ৩৭৮ জন। এই সময়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৩৬ শিশুর মৃত্যু হয়।শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমকিউকে তালুকদার সমকালকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের জন্য বিশেষ কোনো ঋতুকে দায়ী করা যায় না। এ রোগ থেকে শিশুকে মুক্ত রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকা নিশ্চিত করা। পাশপাশি মা ও পরিবারের সবার স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিউমোনিয়া রোধে পিসিভি বিশ্বের সর্বাধুনিক ও উন্নত কার্যকর ভ্যাকসিন হলেও হাতেগোনা কয়েকটি দেশ এ ভ্যাকসিনের সুবিধা পেয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পিএইচসি) ডা. সৈয়দ আবু জাফর মো. মুসা সমকালকে বলেন, নিউমোকক্কাস-ভ্যাকসিনের (পিসিভি) বিষয়ে গ্গ্নোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) অনুমোদন দিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।পরিচালক বলেন, এই টিকা ইপিআইর চলমান পেন্টাভেলেন্ট ডোজের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা তিনটি ডোজে শিশুকে জন্মের পর ৬, ১০ ও ১৮ সপ্তাহ পর দেওয়া হবে। এই টিকা পরোক্ষভাবে পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যকে জীবাণুঘটিত মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখবে।

বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। দেশ পোলিওমুক্ত হয়েছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, নিউমোনিয়া প্রতিরোধেও অনেকটা সফলতা এসেছে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে একটি স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ে তোলা সম্ভব।অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান, ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সমীর কুমার সাহা, সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। আজ দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা দেশব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রাসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।