বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত আজ

স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধ আর শীতার্ত আবহাওয়ার পর বৃষ্টিও বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারলো না ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছে। গতকাল শনিবার ভোররাত থেকে বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা। ভিজে যায় সাথে আনা বিছানাপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। কর্দমাক্ত হয়ে যায় রাস্তাঘাট। বৃষ্টির কারণে মাঘ মাসের শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে প্যান্ডেলের বাইরের খোলা আকাশের নিচে থাকা মুসল্লিদের দুর্ভোগ ছিলো অবর্ণনীয়। দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি থেমে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। আজ অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত। এ মোনাজাতে শরিক হতে বিপুল সংখ্যক মহিলাও টঙ্গীর আশপাশে এসে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসা-বাড়িতে উঠেছেন।

এদিকে বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি হলেও সব কষ্ট যেন হাসিমুখে মেনে নিচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। অনেক মুসল্লি বলেন, দ্বীনের পথে মেহনত করতে এসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকতেই পারে। এসবকে তারা মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত হিসেবেই দেখছেন। ইজতেমায় আসা বরিশালের বেলায়েত হোসেন বলেন, আল্লাহ মানুষের কতভাবে পরীক্ষা নেন। এই বৃষ্টি দিয়ে তিনি হয়তো আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন।

তবে চট্টগ্রাম থেকে আসা মুসল্লি মো. ময়েন উদ্দিন (৫৫) বলেন, সিটি করপোরশন ইজতেমায় ১ম পর্বের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির পানির সাথে মিশে পুরো ইজতেমা ময়দানের রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইজতেমা ময়দানে সামান্য বৃষ্টি হলেও মুসল্লিদের বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। আল্লাহর রহমতে আজ রবিবার জোহর নামাজের আগেই কোনো এক সময় আখেরি মোনাজাত সম্পন্ন করা হবে। তাবলিগ জামাতের দিল্লীর মারকাজের শূরা সদস্য হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতও তিনি পরিচালনা করেছিলেন। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। অনুকূল আবহাওয়া বিদ্যমান থাকলে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২৫/৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি­ অংশ নিবেন বলে আয়োজকরা ধারণা করছেন। আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।

গতকাল বাদ ফজর ভারতের হযরত মাওলানা শওকত আলী, বাদ জোহর পাকিস্তানের মাওলানা মিয়া আনোয়ার হোসেন, বাদ আছর ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ জোয়াহের হোসেন ও বাদ মাগরিব ভারতের হযরত মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করেছেন বলে জানান বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন।

তারা তাবলিগের ছয় ওছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের উপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন। বয়ানে তাবলিগ মুরুব্বিগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ পাকের এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার জীবন। মিছে এ দুনিয়ার আরাম-আয়েসের কথা ভুলে গিয়ে আখেরাতের কথা চিন্তা কর। দুনিয়ার জিন্দেগি ক্ষণ স্থায়ী, যতোক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সকলকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগীর কোন মূল্য নেই। বয়ানে আরো বলা হয়, দীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান মজবুত হয়। ইমান মজবুত হলে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে ওঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়।

যৌতুকবিহীন গণবিয়ে: গতকাল বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ ছিলো যৌতুক বিহীন বিয়ে। সম্পূর্ণ শরীয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন (শনিবার) বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ওই বিয়ে। বিয়ের পর বয়ান মঞ্চ থেকেই মোনাজাতের মাধ্যমে নবদম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করা হয় এবং মঞ্চের আশেপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা-খেজুর বিতরণ করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত: ইজতেমা ময়দানের আশপাশে গড়ে ওঠা হোটেল রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশনের অভিযোগে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে ১২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় গতকাল। তারা ১৫টি হোটেল রেস্তোরাঁকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৫টি মামলা করেছেন। অন্যদিকে বিশ্বইজতেমা ময়দানও এর আশপাশ এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১১ জন পকেটমারকে আটক করে গাজীপুর হাজতে প্রেরণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আরো তিন মুসল্লির মৃত্যু: ইজতেমায় আগত আরো তিন মুসল্লি ইন্তেকাল করেছেন। এরা হচ্ছেন- বরিশাল মৃত মতলব হাওলাদারের ছেলে আলী আজিম (৬৫), নীলফামারী জেলার পলাশ বাড়ি থানার মৃত বদর উদ্দিন খানের ছেলে গোলাম আজম খান (৬০) ও মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি থানার ভোগতারা গ্রামে দরবেশ আলীর ছেলে বশির মিয়া (৫৫)। এ ছাড়া আব্দুল বারেক (৬৫) ও আব্দুর রহমান (৬০) নামের দু মুসল্লিকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।