বিশাল আয়োজনে বেসামাল আচরণ আয়োজক কমিটির সেক্রেটারির

 

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনা মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২য় দিনে খাবার বিতরণে অনিয়ম-সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দর্শনা প্রেসক্লাব সভাপতিকেও মঞ্চে ওঠা নিয়ে অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় কথা গালাগালির ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অধিকাংশ রেজিস্ট্রেশন করা প্রবীণ ছাত্র খাবারের জন্য অপেক্ষা করে জুম্মার নামাজও সময়মতো আদায় করতে পারেননি বলে অনুযোগ করেছেন। এসবের মধ্যে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে দর্শনায় ছড়িয়েছে উৎসবের আমেজ।

দর্শনা মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনালগ্ন পেরিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে কেরুজ বাজার থেকে বর্ণাঢ্য ৱ্যালি বের করে মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উদযাপন পরিষদের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক খলিকুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, উপাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আ. লতিফ অমল, কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু, বিএনপি নেতা খন্দকার হাজি শওকত আলী, আ.লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, গোলাম ফারুক আরিফ, আলী মুনসুর বাবু প্রমুখ।

দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের ছোটছোট দলে আড্ডা ও মধ্যাহ্নভোজ। মধ্যাহ্নভোজে বিশৃঙ্খলাতেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকেনি, চরম অব্যবস্থাপনাও ফুটে ওঠে। ফলে অনেকেই খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন দীর্ঘ সময়। এর আগে মঞ্চে উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলীর সাথে দর্শনা প্রেসক্লাব সভাপতি হানিফ মণ্ডল কথা বলতে গেলে অশ্রাব্য ভাষায় তাকে মঞ্চ ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। দর্শনা প্রেসক্লাব সভাপতি হানিফ মণ্ডল বিষয়টি প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সাংবাদিককে জানালে সকলেই নিন্দা জ্ঞাপন করেন ও আজ শনিবার বিষয়টি নিয়ে প্রেসক্লাবে এক জরুরি বৈঠকে বসার আহ্বান জানান।

এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সভার বক্তব্য শেষ হলে মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে দুপুরের খাবার বিতরণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে খাবার বিতরণের সময় বেলা আড়াইটার দিকে খাবার শেষ হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশন করা নবীন ও প্রবীণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এ সময় বাইরে থেকে এক আলমসাধু ভর্তি খাবার বিদ্যালয় চত্বরে এসে পৌঁছায় । এ সময় ৪/৫ যুবক খাবারগুলো ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। খাবার বিতরণে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক পারকৃষ্ণপুর গ্রামের বেল্টু বাধা দিলে তাকে মারপিট করে মাঠেই সংঘর্ষ ও কয়েকটি বেঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এবং একই সময় একদল যুবক ২য় দফায় একটি খাবার বিতরণী বুথে জোরপূর্বক প্রবেশ করে প্রায় শতাধিক খাবার প্যাকেট ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ ওই বিষয়টি নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা দেখে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রবীণ ছাত্র-ছাত্রী রোদ্রে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে এবং শুক্রবারের জুম্মার নামাজ সময়মতো আদায় করতে না পেরে হতাশ হৃদয় নিয়ে ফিরে যায়।

বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থা বেসামাল হয়ে পড়লে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা দেখে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আয়োজক কমিটির সভাপতি হাজি আলী আজগার টগর বেলা পৌনে ৩টায় মাইকে ঘোষণা দেন আপাতত খাবার বিতরণ বন্ধ থাকবে। বাইরে দাঁড়ানো হাজার হাজার রেজিস্ট্রেশন করা ছাত্র-ছাত্রী খাবার ছাড়াই বাড়ি ফিরতে শুরু করে। এর আধাঘণ্টা পরে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে পুনরায় খাবার বিতরণ শুরু হয়।

বেলা ৩টায় প্রাক্তন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিচারণ। পরপরই বিদ্যালয় উন্নয়নে অনুদান সংগ্রহ করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর রাত ৮টায় ভারতের খ্যাতনামা জীবনমুখী শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী তার সহশিল্পীদের নিয়ে গান গেয়ে দর্শক মাতিয়ে তোলেন। আজ শনিবার শতবর্ষ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে।

‌      এলাকাবাসী ও রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই সাংবাদিকদের জানান, এতো বড় একটা আয়োজনে যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা সকলেই টাকা দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সে মোতাবেক টোকেন অনুযায়ী খাবার সময়মতো বিতরণ হলো না কেন? তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাথার ক্যাপ ও পরনের গেঞ্জিগুলোও বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠান ডোনেট করছে এবং শতবর্ষ উপলক্ষে একটি বই প্রকাশ করেছে তাও বিজ্ঞাপনে ভরা। এছাড়াও, যে ৪টি পৌরসভার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তা প্রায় একই ভাষায় গদবাধা। এ নিয়েও বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ ঝড় উঠেছে বলে সচেতন মহল মনে করছে।