বিশাল অঙ্কের বাজেট পেশ : বহুমুখি চ্যালেঞ্জে বড় ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বিশাল অঙ্কের বাজেট দিয়ে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রীকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে কালো মেঘ দেখতে পেয়েছেন। আবার কোথাও তিনি অপার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছেন আবার বাজেটে তিনি জাতিকে অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়নের আশার বাণীও শুনিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এগুলো অর্জন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশাল অঙ্কের বাজেটে যে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা আদায় করা অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেখানে অর্জিত হয়নি, সেখানে আরও ৩০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় কঠিন হবে।

আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ভৌত অবকাঠামো খাতে। এর পরেই সেবা খাত।

বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানো, শিল্প খাতকে চাঙ্গা করা, ঋণের সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়েছে। আবার ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে দেশি অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। কেননা বাজেটে ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জনের জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। একই সাথে তিনি চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট ও সংশোধিত বাজেট পেশ করেছেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতার ব্রিফকেসসহ সংসদে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল সাদা রংয়ের জামদানি শাড়িতে বিভিন্ন কারুকাজ। অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট। স্পিকারের পরনে ছিল বেগুনি রঙের শাড়ি।

অর্থমন্ত্রী ৩টা ৩৪ মিনিটে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করলেও তার পরেই তিনি বসে বক্তৃতা করার অনুমতি চান। স্পিকারের অনুমতিতে তিনি বসে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। ১২৮ পৃষ্ঠার বাজেট বইয়ের মধ্যে ৯০ পৃষ্ঠা তিনি পাঠ করেন। বাকিগুলো ছিলো ছক। যে কারণে এগুলো পড়তে হয়নি। এ সময় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ ও বিরোধী দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার গ্যালারিতে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন।

এর আগে সংসদে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। বাজেট ঘোষণার পর রাতে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেছেন। বাজেট বক্তৃতার শুরুতে তার পাশে বসা সংসদ সংদস্য শেখ সেলিম অর্থমন্ত্রীকে নানা পরামর্শ দিতে থাকেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীকে কিছুটা বিব্রত হতে দেখা যায়। প্রস্তাবিত বাজেটে শিশু বাজেটের একটি ধারণা দেয়া হয়েছে। যা একেবারেই নতুন। ছিটমহলবাসীদের জন্য এবারই প্রথম ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে দেয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। বাজেটে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

                বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া: প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি বলেছে, বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাজেটে অর্থায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বলেছে, বাজেট শিল্পবান্ধব। অপর একটি অংশ বলেছে, এতে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হবে। তারা আরও প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।

অবকাঠামো উন্নয়ন: গড়ে এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে। মোট বাজেটের ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে এই খাতে। এই অর্থে সরকার আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে ওই সময়ের মধ্যে। পিপিপি নিয়ে অর্থমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করলেও তার বক্তব্যে এর আওতায় ৪২টি প্রকল্প অনুমোদন করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ৩টি প্রকল্পের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। ২টি প্রকল্পের ব্যাপারে অচিরেই চুক্তি হবে। ২৪টি প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে এখন পর্যন্ত ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরও ২৫টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোতে যোগাযোগ, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে আরও ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এসব খাতে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে গ্যাসের অনুসন্ধানে ২৬টি ব্লক অনুসন্ধান শুরু করতে অচিরেই চুক্তি হচ্ছে। বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ঋণের সুদের হার কমছে। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ লাখ লোকের দক্ষতা বাড়াতে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বেসরকারি খাতে। ১ হাজার ৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। কারিগরি খাতে ৯২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ অর্থে ১০০ উপজেলায় কারিগরি বিদ্যালয় হবে। রেলপথের উন্নয়নে ২০ বছরে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।         যোগাযোগ খাত উন্নয়নে ২৬ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

                বাজেটের চ্যালেঞ্জ: এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অর্জন করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, বড় বাজেটের কারণে ঘাটতিও বেড়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়া হচ্ছে। যা বাজেটের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনও কঠিন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে এই হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন বর্তমানে কাঠামোতে সম্ভব নয়। বৈদেশিক সহায়তার পুরো ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এটি সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন বাজেটের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে। কেননা সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা কম। এডিপি বাস্তবায়ন পুরোপুরি করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এটি সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রবল আশাবাদ: অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতার শেষাংশে প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রবল আশাবাদের বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর আগে তিনি দিয়েছিলেন ‘অশোভন আশাবাদের’ বাজেট। এবার তার পুনরাবৃত্তি করে ‘অশোধনীয় আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, এদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী। এ আশাবাদের লক্ষ্য থেকেই তিনি এ বিশাল বাজেট দিয়েছেন। বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি দেশের রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। সেই সাথে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী অর্থবছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আবার ইউরোপের মন্দার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালো মেঘ দেখার মতো দুশ্চিন্তার কথাও শুনিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, সরকারের চলতি মেয়াদের মধ্যেই কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। বিভাগীয় শহরসহ জেলাগুলো যানজটমুক্ত হবে। কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। আর্থিক খাতের প্রসার ঘটবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। বাজেটে দারিদ্র্য উচ্ছেদ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে অতিদরিদ্রের হার থাকবে না। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এ লক্ষ্য অর্জনে সব বৈরিতা ভুলে গিয়ে এক হয়ে কাজ করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাজেট পরিসংখ্যান: আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে জনপ্রশাসন খাতে অর্থাৎ ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুদ পরিশোধ। এতে ব্যয় হবে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। মোট বাজেটের ব্যয়কে এবার মৌলিক তিনটি খাতে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সেবা খাত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হবে ভৌত অবকাঠামো খাতে। এ খাতে মোট বাজেটের ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে। সেবা খাতে ব্যয় হবে ২৮ শতাংশ এবং সামাজিক খাতে ব্যয় হবে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। বাকি অর্থ ব্যয় হবে অন্যান্য খাতে। কৃষি ও পল্লী খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ খাতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।

অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে ভর্তুকিতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, নিরাপত্তা খাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৩ শতাংশ কম। এ বছর অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

টাকা আসবে যেভাবে: প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থায়নের বড় অংশই আসবে রাজস্ব খাত থেকে। রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। করের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর ) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যা মোট আয়ের ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এনবিআরের করের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা, যা মোট আয়ের ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আমদানি শুল্ক থেকে পাওয়া যাবে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, আয়কর খাত থেকে পাওয়া যাবে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক থেকে পাওয়া যাবে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অন্যান্য কর থেকে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। রাজস্ব আয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আয়কর খাত থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভ্যাট।

এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। কর ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

টাকা ব্যয় হবে যেভাবে: বাজেটে টাকা খরচের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে অনুন্নয়ন। এ খাতে ব্যয় হবে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতে ব্যয় হবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিমে ব্যয় হবে ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা।

বাজেটের উন্নয়ন খাতে মোট ব্যয় হবে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অংশই ব্যয় হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায়। এর পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে এডিপিবহির্ভূত খাতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা।

                ঘাটতি বাজেট: এবারের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বাজেট ঘাটতি বেড়েছে ২৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। ঘাটতি বাড়ার হার ৪১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগে কখনোই এত বেশি হারে বাজেট ঘাটতি বাড়েনি। ঘাটতির পরিমাণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ানো হলেও বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে স্বাভাবিক গতিতে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ছে ৪৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।

ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৩২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। ফলে নিট বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে ২৪ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে আসবে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া যাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৩ হাজার কোটি টাকা।

সংশোধিত বাজেট: চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার কমেছে। এ বছরের শুরু থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং সরকারের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত বাজেট কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে আয় যেমন কমেছে, তেমনি ব্যয়ও কমেছে। মূল বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। তেমনি অন্যান্য খাতেও ব্যয় কমেছে।