বিরোধী জোটের গণতন্ত্রের জন্য ঢাকা অভিযাত্রা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারা দেশে নিষেধাজ্ঞার কবলে দেশ : ঢাকামুখি লঞ্চ-বাস চলাচল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার: বিরোধী জোটের গণতন্ত্রের জন্য ঢাকা অভিযাত্রা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ সারা দেশে। এ কর্মসূচি সফল করতে বিরোধী জোটের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যেই চুয়াডাঙ্গা থেকে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তবে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে ঢাকাগামী কোচগুলো বন্ধ করে দেয়া হলে অনেকেরই ঢাকা অভিযাত্রা আটকে যায়। মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ সারা দেশের সাথেই ঢাকার বাস ও লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলছে বলে চুয়াডাঙ্গার সহকারী স্টেশন মাস্টার ফজলুল করিম দাবি করলেও যাত্রীদের অনেকেই ট্রেনের অপেক্ষায় থেকে যথাসময়ে তা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরেছেন।

ঢাকা অভিযাত্রা ঠেকাতে যেমন মরিয়া সরকার ও সরকারি দল। তেমনই বিরোধী দলও এ কর্মসূচি সফল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গতকাল ভিডিও বার্তায় ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাধা উপেক্ষা করে এ কর্মসূচি সফল করতে হবে। দুই পক্ষের কঠোর এ  অবস্থানে জনজীবনে ছড়িয়ে পড়েছে শঙ্কা আর  উদ্বেগ। কর্মসূচি ঠেকাতে গতকাল থেকে কার্যত অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সারা দেশে। বাস, লঞ্চ চলাচল শুধু চুয়াডাঙ্গা মেরেহরপুর ঝিনাইদহ নয়, রাজশাহী, বরিশালসহ অধিকাংশ স্থানেই গতকাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মহাসড়কে বসানো হয়েছে কড়া নজরদারি। স্থানে স্থানে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানী ও আশপাশের জেলায় চলছে গণগ্রেপ্তার। বাসা-বাড়ি, মেস ও আবাসিক হোটেলে চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান। রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিরোধী জোটের অবরোধের পর এবার সরকারিভাবে দেয়া অবরোধের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বানচালের চেষ্টা করা হলেও কর্মসূচি হবেই। তা সফল করতে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকা অবস্থান নিচ্ছেন বলেও তারা জানিয়েছেন। এদিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ দলের পক্ষ থেকে রাজধানীর নয়া পল্টনে গণজমায়েতে বিরোধী নেত্রীর নিরাপত্তা দেয়া ও মাইক ব্যবহারের জন্য সহযোগিতা চাওয়া হলেও গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ জননিরাপত্তার কথা বলে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে। গতকাল মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, জননিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ওই দিন ঢাকায় কোন সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এর এক দিন পর গত বুধবার ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত ও সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) দুটি চিঠি দেয় বিএনপি।

প্রশাসনের নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার বাস মালিকরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় বলে জানান তারা। চুয়াডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার বাস কাউন্টারগুলো যাত্রী শূন্য। দুটি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জানান, গতকাল বেলা ১০টা পর্যন্ত অন্যান্য দিনের মতো গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু দুপুরের পর প্রশাসন থেকে জানানো হয় আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।

এদিকে বেলা ২টার দিকে মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে ঢাকার উদ্দেশে একটি বাস ছেড়ে আসলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী পথিমধ্যে বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে সেটিকে মেহেরপুর ফেরত পাঠায় বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী মেহেরপুর থেকে ঢাকায় যাবেন বলে জানিয়েছেন ১৮ দলীয় জোটের নেতারা। ইতোমধ্যে কয়েক’শ নেতা-কর্মী ঢাকা পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে বাকিদের যাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে মেহেরপুর থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল আকস্মিক বন্ধ হয়ে গেছে। নেতা-কর্মীরা যাতে ঢাকা যেতে না পারে তার জন্য ঢাকাগামী সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ জোট নেতাদের। তবে বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন বন্ধ করা হয়নি। পথে নিরাপত্তার অভাব ও যাত্রী না পাওয়ায় দুপুর থেকে দূরপাল্লার পরিবহন তেমন চলাচল করছে না।

মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন জানান, ‘চল চল ঢাকা চল কর্মসূচী’ বাঞ্চাল করতে সরকার নানমুখি ষড়যন্ত্র করছে। ইতোমধ্যে মেহেরপুর থেকে সকল প্রকার দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকার যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ কর্মসূচি যাতে ১৮ দল বাস্তবায়ন করতে না পারে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সরকার নেতা-কর্মীদের ঢাকায় যেতে বাধা প্রদান করবেন ভেবেই কয়েকশ’ নেতা-কর্মী বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহনের এক কাউন্টার মাস্টার জানান, যাত্রী থাকা সত্বেও ওপরের নির্দেশে মেহেরপুর থেকে দূরপাল্লার সকল পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল জানিয়েছেন, দূরপাল্লার একটি গাড়ির মূল্য অর্ধকোটি টাকারও বেশি। রাস্তায় কোনো গাড়ি ভাঙচুর হলে এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? নিরাপত্তার অভাব ও যাত্রী না থাকায় সকল দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে আন্তঃজেলার সকল রুটে যান চলাচল করছে ও করবে। রাজনৈতিক কারণে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে।

মেহেরপুরের পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পরিবহন বন্ধ করা হয়নি। কারণ এটি পরিবহন মালিকদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। পুলিশের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের কোনো হয়রানি করা হচ্ছে না বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হঠাত করেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

ঝিনাইদহ জেলা বাস মালিক সমিতিসূত্রে জানা গেছে, নাশকতার আশঙ্কায় প্রশাসনের নির্দেশে তারা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচির কারণে হঠাত করে দুপুর আড়াইটা থেকে ঢাকাগামী সব পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। জেআর পরিবহনের কাউন্টারের ম্যানেজার চঞ্চল ইসলাম বলেন, দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে বলা হয়। এরপর থেকে তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।

নাশকতার আশঙ্কায় শহরের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঢাকাগামী বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বাস চলাচল বন্ধ করতে কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি।

এদিকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান জানান, যেকোনোভাবে ঝিনাইদহ থেকে ৬ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় সমাবেশে যোগদান করবেন।