বিজিবির পক্ষ থেকে ফের প্রতিবাদ : বিএসএফ’র আবারো অস্বীকার দামুড়হুদার বাড়াদি সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক : আবুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন

দর্শনা অফিস: গরুব্যবসায়ী আবুকে পিটিয়ে হত্যার আবারো কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। আটক ও হত্যার কথা ফের পুরোদমে অস্বীকার করলো বিএসএফ। দামুড়হুদার বাড়াদি সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে পতাকা বৈঠক। আবুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। সীমান্তে এখনো কমেনি আতঙ্ক। পরিস্থিতি রয়েছে স্বাভাবিক। দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নাস্তিপুর হাইস্কুলপাড়ার রহিম বক্সের ছেলে আবুল হোসেন ওরফে আবু দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পথে জোন হাজিরা গরু পাচার করে এনে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কামারপাড়া সীমান্ত পথে ভারতে বিজয়পুর এলাকায় যান জোন হাজিরায় গরু আনতে। সীমান্ত থেকে প্রতিদিন রাতেই বাড়ি ফিরলেও ওই রাতে আবু বাড়িতে না ফেরায় মহাচিন্তায় রাত কাটায় স্বজনেরা। সকাল থেকে শুরু হয় সন্ধান নেয়া। গত শুক্রবার সকালে ভারত থেকে খবর পায় আবু ভারতের বিজয়পুর বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ার। জানানো হয় বাড়াদি বিজিবিকে। এ খবরে বাড়াদি বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত পতাকা বৈঠকের জন্য বিজয়পুর বিএসএফকে পত্র দিলে সকাল ১০টার পর সীমান্তের ৮১ নং মেন পিলারের কাছে অনুষ্ঠিত হয় বিজিবি-বিএসএফর পতাকা বৈঠক। ১০ টা ২২ মিনিটে বৈঠক শুরু হলেও মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় বৈঠক শেষ হয়। এ বৈঠকে বিএসএফ’র পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে তারা আটক করেননি। পরে বিজিবি ও গ্রামবাসী আবুকে খুঁজতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরে যখন যে যার মতো বাড়ি ফেরে সে সুযোগে আবুর লাশ সীমান্ত ঘেষা মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে কে বা কারা বাংলাদেশের অভ্যান্তরে ফেলে যায়। বিকেল ৩টার দিকে দ্বিতীয় দফা খোঁজাখুঁজির সময় কামারপাড়ায় মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে আবুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে বাড়াদি বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আলয় সিউসের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে বিজিবি সদস্যরা গ্রামবাসীর সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে দেয়া হয় পুলিশকে। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ এসআই ইব্রাহিম আবুর লাশ গ্রহণ করে ময়নাতদন্তের জন্য নেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে। গতকাল শনিবার আবুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে নেয়া হয় নিজ গ্রামে।

সন্ধ্যার আগে স্থানীয় গোরস্তানে বেদনা বিধুর পরিবেশে আবুর লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে আবুকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শনিবার ফের বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সীমান্তের ৮১ নং মেন পিলারের বিজিবি-বিএসএফর কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ৮ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আবুকে আটক ও হত্যার কথা আবারো অস্বীকার করলো বিএসএফ। এ বৈঠকে বিজিবির পক্ষে উপস্থিতি ছিলেন ঠাকুরপুর বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শমজেদ আলী, বাড়াদি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আলয় সিউস এবং বিএসএফ’র পক্ষে ছিলেন ভারতের বিজয়পুর বিএসএফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এসি এমএল ত্রিপার্টি সিং। সীমান্তে বিএসএফ’র এখন নয়া কৌশলে বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিক হত্যা করছে। গুলি করে খুন করলে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ টের পেয়ে যাওয়ার কারণেই এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছে বলে মন্তব্য করেছে সচেতনমহল। তবে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক কাটেনি। সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে বিজিবি।