বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ : চুয়াডাঙ্গায় মিছিল টায়ারে আগুন : দূরপাল্লার কোচ চলেনি

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকাল অবরোধের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পার হয়েছে। তবে দূরপাল্লার কোনো কোচ চলেনি। গতকাল সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের অদূরে রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধকারীরা জানান দেয়। চুয়াডাঙ্গা বিএনপির দু পক্ষই পৃথক স্থান থেকে গতকাল অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়ে মিছিল করেছে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বগুড়া, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এসব ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার ১৮২ জনকে আটক করেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ আদালতের অদূরে সড়কে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাত করে সড়কের ওপর টায়ারে এ আগুন দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলে করে ওই স্থানে আগুন দিয়েই সটকে পড়ে। এ ঘটনার পর শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি এরশাদুল কবির চৌধুরীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি এরশাদুল কবির চৌধুরী জানান, মূলত আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই আগুন দেয়া হয়েছে।

১৮ দলের ডাকে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ২য় দিন পালন করেছে জেলা বিএনপি। পাতানো নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নতুন তফশিল ঘোষণার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক অতিক্রম করে জেলা কার্যালয়ে জমা হয়ে সমাবেশ করে। জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ওয়াহেদুজ্জমান বুলা, শহিদুল ইসলাম রতন, মজিবুল হক মালিক মজু, আবু জাফর মন্টু, মোকারম হোসেন, মো. ফজলুর রহমান, মোখলেছুজ্জামন মোখলেছ, ফারুক মল্লিক, আতিয়ার রহমান, লিটন, আরিফুজ্জামান পিন্টু, মামুন রেজা সবুজ, এমএ তালহা, মঞ্জুরুল জাহিদ, ফারুক আহমেদ, শাহনেওয়াজ কালু, টোটন খান, আহসান হাবিব মুক্তি প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় অবরুদ্ধ করে দেশে তামাশার নির্বাচন করছে সরকার। যা দেশ-বিদেশে গ্রহণ যোগ্যতা পাবে না।

এদিকে ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের সমর্থনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও পৌর ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বেলা ১১টার দিকে কোর্টমোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কোর্ট মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সভাপতিত্ব করেন পৌর ১৮ দলীয় জোটের যুগ্মআহ্বায়ক মফিজুর রহমান। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল হালিম হিরু, যুগ্মসম্পাদক মাহামুদুল হক পল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক রউফুন নাহার রীনা, দফতর সম্পাদক আবু আলা সামছুজ্জামান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম, পৌর বিএনপির সহসভাপতি আওরঙ্গজেব বেল্টু, পৌর জামায়াত ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, যুগ্মআহ্বায়ক একরামুল হক, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজাহান খান, জেলা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনু প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যরো জানিয়েছে, ১৮ দলীয় ঐক্য জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপি ১৮ দলীয় ঐক্য জোট দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি হাজি মোড় হয়ে হলুদপট্টিতে পৌঁছুলে পুলিশের বাধায় তারা শহরের প্রধান সড়কে না ঢুকতে পেরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসরাফ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির নূর মোহাম্মদ টিপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক ডাবু। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন রেজাউল করিম, বিল্লাল হোসেন, মান্নান হোসেন, আব্দুল হান্নান, আব্দুল কাদের, মানোয়ার হোসেন, জামিরুর ইসলাম, মহিনুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, ডা. আব্দুল লতিফ, জমির উদ্দিন, রবিউল মেম্বার, সাহাজান সরকার, ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল হক, শওকত খান, হাফিজুর রহমান চমক, মহির উদ্দিন ,আব্দুর রশিদ, উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিল্টন মল্লিক প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও গতকাল বৃহস্পতিবার মেহেরপুর থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। আন্তঃজেলার সকল সড়কে বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে জেলার মধ্যে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। এতে দূরের যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আর বাস-ট্রাক শ্রমিকরা অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান কয়েকজন শ্রমিক। তবে রাতের বেলা মেহেরপুর থেকে সবজি বোঝায় বেশ কিছু ট্রাক রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে ক্ষেতমালিক ও সবজি ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন ভাড়া। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলা সবজি চাষিরা।

এদিকে অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও রাজপথে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি জোটের নেতা-কর্মীরা। যৌথবাহিনীর ব্যাপক অভিযানে আত্মগোপন করেছেন ১৮ দলীয় জোটের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। মাঠে ময়দানে থাকা নেতা-কর্মীদেরকেও দেখা যায়নি।