বিএনপির শীর্ষ চার নেতা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, বারিধারা ও গুলশান থেকে বিএনপির সিনিয়র চার নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের এমপি নাজিমউদ্দিন আহমেদ।

6233_f4

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ২টার দিকে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বের হওয়া মাত্রই জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই অপর এক অভিযানে বারিধারার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও নাজিমউদ্দিন আহমেদ। সন্ধ্যায় গুলশানের নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ১২ ঘণ্টা হরতাল বৃদ্ধির ঘোষণার পরই গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। শাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বিএনপির এ নেতাদের গ্রেফতারের পর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যান। অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এক আলোচনাসভার আয়োজন করে। ‘৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত নির্বাচন’ শীর্ষক ওই আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি সরকার ও বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বেলা সোয়া ২টার দিকে ওই অনুষ্ঠান শেষে তিনি সচিবালয় সংলগ্ন গেট দিয়ে বাইরে বের হন। এ সময় শাদা পোশাকের কয়েকজন গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মুহূর্তের মধ্যেই খন্দকার মাহবুবকে একটি গাড়িতে তুলে নেয়। খন্দকার মাহবুবকে আটকের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গ্রেফতারের দেড় ঘণ্টা মাথায় গোয়েন্দা পুলিশের অপর একটি দল বারিধারায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। গোয়েন্দা পুলিশ এ সময় ওই অফিস থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও নাজিমউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় বিরোধীদলের চিফ হুইপের অফিসে উপস্থিত মহিলা দলের নেত্রী শিরীন সুলতানা জানিয়েছেন, ওই ভবনের তৃতীয় তলায় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ছাড়াও বিএনপির সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফউদ্দিন নিজান, লায়ন হারুনুর রশিদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ওই অফিসে অভিযান চালিয়ে সবাইকে নিচে নিয়ে যায় এবং গাড়িতে তোলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়িতে বসিয়ে রেখে ফজলুল হক মিলন ও নাজিমউদ্দিন আহমেদকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশ তাদের জানায়, ‘আপনাদের আর দরকার নেই।’ পরে তাদের দুজনকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, বিরোধীদলের ঢাকা অভিযাত্রা ও সমাবেশের আগের দিন ২৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। পরের দু দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা, সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ অভিযোগেই মূলত তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন ও নাজিমউদ্দিন আহমেদকে কোন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই বলেননি উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।