বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা হাস্যকর : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, এই দলটি কোনো গণতন্ত্রের পথে চলে। তারা জানে তো শুধু ধ্বংস ও মানুষকে হত্যা করতে। কোনো বিদেশি মেহমান সফরে আসলে তাদের কাছে নালিশ করে এবং কান্নাকাটি করে বলে দেশে নাকি গণতন্ত্র নেই। উনি (খালেদা জিয়া) গণতন্ত্রের অর্থ কী বোঝেন? গণতন্ত্রের সংজ্ঞা তো দূরের কথা, ভালো করে গণতন্ত্র বানান করে বলতে পারবেন কিনা জানি না। তিনি বলেন, যারা ভোট চুরি করে, মানুষকে হত্যা করে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে, সেই দলের কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। জাতির এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা হাস্যকর।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশিদের কাছে নালিশ বা কান্নাকাটি করে কোনো লাভ হবে না। অপকর্মের কারণেই দেশবাসী ওই দলটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, যুগ যুগ ধরেই তাদের প্রত্যাখ্যান করে যাবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোট কারচুপি করে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ-হুদাকে এমপি বানিয়ে সংসদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটচুরির অপরাধে তীব্র গণরোষের মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। যারা ভোটচুরির দায়ে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল, তাদের মুখে আর যাই হোক গণতন্ত্রের কথা মানায় না।

বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। আর উনি বলেন, ক্ষমতায় আসলে নাকি দুইটা পদ্মা সেতু করবেন! যিনি এতিমের টাকা আত্মসাত্ করেন, লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করেন, যার ছেলে অর্থ পাচারের অভিযোগে বিদেশের আদালতে দণ্ডিত হয়েছে- তার মুখে এসব কথা শোভা পায় না। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই সবদিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত-সমৃদ্ধ হচ্ছে, দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, নিজেদের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারছি। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের মানুষ শান্তি ও সুখে রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব নেতারা আমাদের কাছে জানতে চান কীভাবে এটা সম্ভব? এর পেছনে ম্যাজিক কী? আমি তাদের বলেছি আমাদের ম্যাজিকই হচ্ছে দেশপ্রেম আর দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা। এ কারণেই বাংলাদেশ এতো সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তার স্থলে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেয়ার জন্য দলটির জাতীয় কমিটির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৯৮১ থেকে ২০১৬। ৩৫ বছর ধরে সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছি, আর কতো? বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের যে চারা রোপণ করে গিয়েছিলেন, তা আজ মহিরূহে পরিণত হয়েছে। এ সময় সব নেতারাই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে একযোগে ‘না’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে নেতৃবৃন্দের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলের বাজেট এবং দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আলোচনার পর তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। দীর্ঘ চার বছর পর জাতীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সারাদেশের প্রবীণ নেতারা তাদের নানা অভিযোগ এবং পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন।