বিএনপির তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ঢাকায় করতে চায় সমাবেশ : ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি করে যাবে শহীদ মিনারে

স্টাফ রিপোর্টার: খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুই দফা টানা কর্মসূচির শেষে দুদিন বিরতি দিয়ে ফের তিন দিনের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া শিগগিরই ঢাকায় একটি সমাবেশ করার কথাও জানিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে আছে শনিবার দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর অভিযান, রোববার সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মরকলিপি প্রদান এবং মঙ্গলবার দেশব্যাপী ঢাকা মহানগর ছাড়া সব জেলা-মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ।

পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে প্রথম দফায় গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দুই দিন সারাদেশে বিক্ষোভ করে বিএনপি। এরপর তারা টানা তিনদিনের কর্মসূচি দিয়েছিলো যা বুধবার অনশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভুয়া ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা প্রদানের প্রতিবাদে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নতুন কর্মসূচি দেয়া হলো। বিএনপি শান্তি চায়, কোনো সংঘাত চায় না। দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করতে চায় যাতে আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। সেই লক্ষ্যেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলন, শিগগিরই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশের জন্য অনুমতি চাওয়া হবে। তারিখ ঠিক করে জানানো হবে। আর সোহরাওয়ার্দীতে জনসভা করার অনুমতি সরকার দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপির নেতৃত্ব শূন্য করার নীলনকশা করছে। যাতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি যেন আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। এর অংশ হিসেবে নতুন আদালত সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটা মামলাকে ভেঙে দুইটা করা হয়েছে। বিস্ফোরকের জন্য একটা মামলা, ভাঙচুরের জন্য আরেকটা মামলা। অর্থাৎ বিরোধী দল যারা করবে তাদের এই মামলা ফেস করতে করতে সারাটা জীবন চলে যাবে। মির্জা ফখরুল বলেন, এই ভয়াবহ নির্যাতনের অবস্থা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য একটাই- তারা দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায় এবং আগামী নির্বাচনে আবার জয়ী হতে চায়। তারা জানে যে, সুষ্ঠু, অবাধ ও প্রতিযোগিতামূলক যদি নির্বাচন হয় তারা জয়লাভ করতে পারবে না বলেই এই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে।

খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার ‌পরিত্যক্ত কারাগারে রাখার ঘটনার ‘চরমতম নির্যাতন’ উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, অতীতে মধ্যযুগে যে ধরনের কারা নির্যাতন করা হতো, ব্রিটিশ ঔপনিবেসিক আমলে স্বদেশি আন্দোলনে যারা ছিলেন, দেশের জন্য যারা লড়াই করেছিলেন, তাদের যেভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো, যে নির্যাতন করা হতো, তেমন যন্ত্রণা ও নির্যাতন এই মহান নেত্রীকে করা হচ্ছে।

তার মুক্তির দাবিতে দলীয় কর্মসূচি করতে না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে যে কর্মসূচিগুলো দেয়া হয়েছে তা একেবারেই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। এগুলোও সরকার করতে দিচ্ছে না। ঢাকায় বুধবার যে অনশনের কর্মসূচি ছিলো সেটাকে সংকোচিত করে শেষ করতে বলেছে পুলিশ। এরমধ্যেও বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। অর্থাৎ কোনো স্পেসই দেয়া হচ্ছে না। এই স্পেস না দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বড় লক্ষণ যে, তারা কোনো নকশা তৈরি করেছেন। সারাদেশে নাশকতার কথা বলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারির কার্যক্রম প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় এবার একুশের প্রহরে নয়, ভোরে প্রভাতফেরি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে বিএনপি।

তিনি বলেন, প্রতি বছর শহীদ রাত ১২টা এক মিনিটে নেত্রীকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যেতো বিএনপি, যেহেতু নেত্রী এবার সাথে নেই, সেজন্য সেইভাবে হবে না। সকালবেলা প্রভাতফেরি করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা।

মিলনায়তন ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষকে সকলের প্রতি সমান আচরণ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন নন-পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন পেশাজীবীদের একটা সংগঠন। তাদের মিলনায়তনে বিএনপিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি ভাড়া নেয়, সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে থাকে। মিলনায়তনের ভাড়া ৫৬ হাজার টাকা। তারা এখন বিএনপিকে ভাড়া দিচ্ছে না। জাতীয় প্রেসক্লাবও সাংবাদিকদের সংগঠন, তারাও সেভাবে বিএনপিকে ভাড়া দিচ্ছে না। এই বিষয়গুলো ঠিক না। একটা রাষ্ট্রে, একটা সমাজে এই ধরনের অর্গানাইজেশনগুলো যদি পলিটিসাইজ হয়ে যায়, পলিটিক্যাল হয়ে যায়, বিভক্ত হয়ে যায় তাহলে কীভাবে হবে? তাই অনুরোধ করব, আপনারা দয়া করে সকলের প্রতি সমান আচরণ করুন। অন্যথায় এই বিষয়গুলো ভালো ফল আনে না।