বাল্যবিয়ের জন্য জনপ্রতিনিধিদের পদচ্যুত করতে হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার: বাল্যবিবাহ বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রশ্নে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। রুলে প্রতিটি বাল্যবিবাহের জন্য সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা কেন দায়ী হবেন না এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ তথা পদচ্যুত করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্বত:প্রণোদিত হয়ে সোমবার এই আদেশ দেন। আদালত বলেন, জনপ্রতিনিধিরা অফিস নেবেন দায়িত্ব নেবেন না তা হবে না। বাল্যবিবাহ বন্ধে ভূমিকা রাখতে জনপ্রতিনিধিরা দায়বদ্ধ।

আদালত বলেন, বাল্যবিবাহ হলে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কমিশনাররা দায়ী থাকবেন।

আদেশের এই অনুলিপি দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উল্লেখিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে পাঠাতে জনপ্রশাসন সচিব এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল তাইতাস হিল্লোল রেমা উপস্থিত ছিলেন।

২৪ ঘন্টায় আট বাল্যবিবাহ বন্ধ শীর্ষক শিরোনামে শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, কিশোরী কনে ও তাদের সহপাঠী এবং এলাকাবাসীর সচেতনতায় গত ২৪ ঘন্টায় বাল্যবিবাহ থেকে রেহাই পেয়েছে আট কিশোরী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট ২০১৩ সাল থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ শুরু করে। বিভাগীয় কমিশনারদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনার হিসাব রাখে এই ইউনিট। গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনা ছিল ১৩ হাজার ৩৩৪টি। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৭৭৫টি। অবশ্য ২০১৬ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনা কমে আসে, ৬ হাজার ৩৮৯টি। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) তথ্যমতে, যে দেশগুলোতে বাল্যবিবাহ বেশি, বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৫ সালে ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা জরিপের ফল অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫২ শতাংশ নারীর ১৮ বছর পার হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে।

প্রতিবেদনের উপরোক্ত অংশ বিশেষ পাঠ করে হাইকোর্ট বলেন, এতে প্রতীয়মান হয় যে বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসন খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধে যথাযথ ভূমিকা রাখছে। এরপরই হাইকোর্ট রুল জারি করে। আদালত বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিটি বাড়িতে কি রান্না হচ্ছে তার খবর পর্যন্ত জানেন। আর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাল্য বিবাহের ঘটনা তারা জানবেন না এটা হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা রোধে তাদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।