বাদ পড়েছেন মহাজোট সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন মহাজোট সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, অসৎ উপায়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের তীব্র সমালোচনা, সুশীল সমাজের দাবি এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শক্ত অবস্থানের কারণে মূলত ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে এসব ব্যক্তির।

তাদের মধ্যে রয়েছেন কালো বিড়ালখ্যাত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রেলের ঘুষ কেলেঙ্কারি ঘটনার পর তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রাখা হলেও তার শেষরক্ষা হলো না। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সন্ত্রাসী বিকাশকে মুক্তি দেয়াসহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- বদলি-পদায়নে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ। বিতর্কিত এ ব্যক্তি এর আগে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের সদস্যপদটি হারান। তার মতোই ভাগ্য বিপর্যয় হয়েছে সাবেক শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর। নরসিংদীর পৌর চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডে মদদের অভিযোগ উঠলে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ হারান। এবার মন্ত্রিত্ববঞ্চিত হলেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন দলীয় সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে বিতর্কিত হন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতে দলের মধ্যেই প্রবল চাপে রয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের পদ, এরপর এমপি মনোনয়ন এবং মহাজোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হন তিনি। তারপর এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি চালান গত পাঁচ বছর। সেই দীপু মনির ঠাঁই হয়নি এবারের মন্ত্রিসভায়।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা তার ছেলেকে নিয়ে বলতে গেলে লুটপাট চালান ওই মন্ত্রণালয়ে। তিনিও এবার ফিরতে পারেননি। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে একটি দোকান চালাতেন ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে দলের প্রচার সম্পাদক। আগের কমিটিতে ছিলেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দায়িত্ব পান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর। দীপু মনির সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে দেয়া হয় বন ও পরিবেশে। পরে পদোন্নতি পেয়ে কেবিনেট মন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য করে ব্যাপক সমালোচিত হন। তিনিও এবার ফিরে আসতে পারেননি। সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী পদে থাকার সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি মসনদ ফিরে পাননি। দুর্নীতির কারণে সমালোচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হকের অবস্থা অনেক আগেই নড়বড়ে হয়ে যায়। এ কারণে তার দলীয় মনোনয়নও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় ব্যবসায়ী রমেশ চন্দ্র সেন পানিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার থেকে শুরু করে সব ধরনের দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। তিনিও ফিরতে পারেননি।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি। ফিরতে পারেননি মৎস্যমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।

বলতে গেলে দুর্নীতির বরপুত্রে পরিণত হন সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। সংসদ সদস্য হিসেবে আগেই পরাজিত হয়েছেন তিনি। নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি তার। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলামের যথেষ্ট সুনাম থাকলেও তিনিও এবার ফিরতে পারেননি।

আরও যারা বাদ পড়েছেন তারা হলেন- স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক, আবদুল হাই প্রমুখ। এছাড়া বাদের তালিকায় আছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুখ মোহাম্মদ।

প্রতিমন্ত্রী মোতাহার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রীর ক্ষমতায় তিনি নেতাকর্মীদের অবহেলা করে আত্মীয়করণ এবং ছেলে রাজনীতি না করা সত্ত্বেও তাকে নিজ জেলার একটি থানার সাধারণ সম্পাদক করেন। শামসুল হক টুকু তার ছেলের ভোট ডাকাতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েন। আহাদ আলী সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ তৈরি, ছেলেদের টেন্ডার-বাণিজ্য, নেতাকর্মী ও জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগে অভিযুক্ত। এনামুল হক ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন বলে দলে সমালোচনা আছে। তাছাড়া এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে তার এতো দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো যে তিনি দলের মনোনয়নও পাননি। তার এলাকায় জামায়াত-শিবির ব্যাপক তাণ্ডব চালালেও তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন।

আরও যারা বাদ পড়েছেন তারা হলেন- চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। মাহবুবুর রহমান তালুকদার, ওমর ফারুক চৌধুরী দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।