বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা যুক্তরাজ্যের

স্টাফ রিপোর্টঅর: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি’র ক্রমাগত দ্বন্দ্বের মধ্যে আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গভীর সংঘাতের আশঙ্কা করছে যুক্তরাজ্য। হাউস অব কমন্সের বাংলাদেশ বিষয়ক চলতি মাসের হালনাগাদ এক ব্রিফিং পেপারে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) লাগাতার বিবাদের মধ্যেই আগামী বছরে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে আবারো গভীর উত্তেজনা-সংঘাত ফিরে আসতে পারে।  পাশাপাশি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার বিষয়টিও স্থান পায়।

হাউস কমন্স লাইব্রেরি গবেষণা টিম প্রতিবছর নিরপেক্ষভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের রাজনীতি ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলির ওপর এই ব্রিফিং পেপার প্রকাশ করে। মূলত এই গবেষণাপত্র কোনো দেশের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শীর্ষ এই রাজনৈতিক দল দুটির পারিবারিক বৈরী সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘকাল থেকেই চলে আসছে- যা আজও বিদ্যমান। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন ছিলো ব্যাপকভাবে ‘ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য’। এই নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিএনপি তাতে অংশ নেয়নি। দলটি নির্বাচন পরবর্তীতে বছর ধরে হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।

২০১৬-২০১৭ সালে দুই পক্ষই আগামী বছরের নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে নিয়ে কথা চালাচালি করে আসছে। কিন্তু তারা একমত হতে পারেনি। অবশ্য ২০০৮ সালে এই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর তারা সংবিধানে পরিবর্তন এনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় এবং ২০১৪ সালে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই বিএনপি তাদের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের দাবিতে অটল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয় আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রী সভার কথা বলে আসছে এবং আগামী নির্বাচন একইভাবে অনুষ্ঠান করতে চায়। এই প্রস্তাব বিএনপি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এতে আরো বলা হয়, সমঝোতা না হলে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা দলটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সমর্থক গোষ্ঠী ও ভোটারের মধ্যে কতটা বিশ্বাসযোগ্য আস্থা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়েও ভাবছে। তবে বিএনপি ২০১৪ সালের মতো যদি নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকট হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের সমালোচকরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে লাগাতার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি দাবি করছে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এমনকি সরকারি পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের অবাধ গ্রেফতার, অপহরণ, গুম-খুন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার প্রবল অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইসলামী উগ্রবাদী হামলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এমনকি ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো হামলা চালিয়েছে। এতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মাত্রা যোগ হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বিরোধী গোষ্ঠী একমত।

অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের আগস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে পেশ করা পাঁচ দফা প্রস্তাবেরও উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে মানবাধিকারে অগ্রাধিকারভিত্তিক দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিবেদনে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের গভীর সম্পর্কের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য উচ্ছেদে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম।