বর্ণালি রঙের সুকণ্ঠী পাখিটির দেখা মেলা কঠিন : কৃষক বন্ধু পাখিটি বিলুপ্তির শেষ ধাপে

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও, কও কথা অভিমানী। সেধে সেধে, কেঁদে কেঁদে যাবে কতো যামিনী।’বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বউ কথা কও কবিতার গ্রামবাংলার সেই অতিচেনা প্রিয় হলদে পাখিটি হারিয়ে যেতে বসেছে।

শৈশবে গ্রামের আনাচে-কানাচে চিরচেনা এ পাখির ডাক শুনে মুখ ভেংচিয়ে খেপায়নি, এমন কে আছে। আর এখন গ্রামের গাছের ডালে ডালে তন্নতন্ন করে খুঁজেও বর্ণালি রঙের সুকণ্ঠী পাখিটির দেখা মেলা কঠিন। সুরেলা কণ্ঠের পাখিটি নিজের গুণেই মানুষের নজর কাড়তো। বউ কথা কও নিজের নামেই নয়, আরো অনেক কথা ছিলো তার কণ্ঠে। যেমন- পচার বউলো, পচা কাঁঠাল, খাবি কে, পচা খাবি, বউ সরষে কোটো, আরও কতো কথা। সব ঋতুতে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক বৃক্ষ নিঃতরঙ্গ পরিবেশ মাতিয়ে রাখতো এ পাখিটি। বাড়ির আঙিনার পেয়ারা গাছে বসে ডাকতো, আর শিশুরা মুখ ভাঙিয়ে খেপাতো। কিন্তু এখন পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক বৃক্ষ নিধন হয়েছে। যদিও বৃক্ষরোপণ বেড়েছে। কিন্ত সে শুধু বাণিজ্যিক বৃক্ষ। আর রয়েছে জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের কুফল। ফলে হলদে পাখিটি বিলুপ্ত হতে বসেছে। আজকের নতুন প্রজন্মের কাছে পাখিটি অপরিচিত হতে বসেছে। হলদে পাখিটি আকৃতিতে অনেকটা শালিক পাখির মতো। দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম ওরিওলিদি এবং ইংরেজি নাম অরিওল। গায়ের পালক উজ্জ্বল হলুদ। লেজ ও পাখার অগ্রভাগের পালক কালো। গলা ও মাথার রং চিকচিকে কালো হলেও ঠোঁট ও চোখ লাল টকটকে। আর পা দুটো হালকা কালো।

এরা সাধারণত ঝোপ-ঝাড়ে, শুকনো ডালপালা, খড়কুটো বা আগাছা দিয়ে গাছের ডালে বাসা বানায়। বসন্ত ও গ্রীস্মের মাঝামাঝি এদের প্রজনন মরসুম। শাদা রঙের বাদামি ফোঁটাযুক্ত ৩/৪টি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দুজন মিলে ডিমে তা দিয়ে ১৫ থেকে ১৭ দিনে বাচ্চা ফোটায়। লম্বা ঠোঁটওয়ালা হলদে পাখিটি পোকা মাকড় ও ফল সবই খায়। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘আরণ্যক’ উপন্যাসেও এ পাখির উল্লেখ রয়েছে। পাখি বিশেষজ্ঞরা বলেন, কৃষক বন্ধু পাখিটি বিলুপ্তির শেষ ধাপে রয়েছে। ফসলের ক্ষতিকারক পোকা মাকড়ই এদের প্রধান খাদ্য। সে কারণে এ পাখিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কৃষকেরও ক্ষতি হয়েছে।